কিশোরগঞ্জে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুর আড়াইটার দিকে গুরুদয়াল কলেজ ছাত্রদলের আয়োজনে একটি প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২২৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা পারভেজকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে। এ ঘটনায় পুরো শিক্ষাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া এবং ক্ষোভের আগুন।
মানববন্ধনটি শুরু হয় গুরুদয়াল কলেজ ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ থেকে। সেখান থেকে অংশগ্রহণকারীরা কলেজ প্রদক্ষিণ করে এসে কলেজ গেইটের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন এবং কালো ব্যাজ। ব্যানারে লেখা ছিল—“পারভেজ হত্যার বিচার চাই”, “খুনিদের ফাঁসি চাই” ইত্যাদি স্লোগান।
গুরুদয়াল কলেজ শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তৃতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পারভেজ শুধু একজন শিক্ষার্থী নয়, সে ছিল ছাত্র রাজনীতির একজন সাহসী সৈনিক। তাকে এভাবে দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করা মানে হলো শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তার চরম ব্যর্থতা।” বক্তারা আরো বলেন, “যদি দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা না হয়, তাহলে সারাদেশে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
উল্লেখ্য, জাহিদুল ইসলাম পারভেজ কিশোরগঞ্জ জেলার একটি পরিচিত মুখ ছিলেন। ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি তিনি পড়াশোনাতেও ছিলেন নিয়মিত। অথচ এই মেধাবী শিক্ষার্থীকে সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পারভেজ কলেজ গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন, ঠিক সেই সময় একদল মুখোশধারী যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাকে আক্রমণ করে। আশেপাশে থাকা লোকজন ভয়ে কিছু করতে না পারলেও পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা রয়েছে, কেন এই ঘটনা ঘটানো হলো, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ পায়নি। তবে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা বলছেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে এবং এজন্যই তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, "এই হত্যার বিচার যদি দ্রুত না হয়, তাহলে দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে ভয় ও অনিশ্চয়তা আরও বেড়ে যাবে। আমরা নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন চাই, খুনিদের শাস্তি চাই।"
এই ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তারে প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নেবে—এমন প্রত্যাশা রয়েছে ছাত্রদলসহ এলাকাবাসীর। সেই সঙ্গে তারা আশা করছেন, মেধাবী ছাত্র পারভেজের নির্মম হত্যার সুষ্ঠু বিচারই হবে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটি দৃশ্যমান বার্তা।
Post a Comment