ইটনায় ৯৪ পিস ইয়াবাসহ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আটক, স্থানীয়দের প্রশংসনীয় উদ্যোগ

ইটনা প্রতিনিধি; রাইয়্যাইন
কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার রায়টুটি ইউনিয়নের কুড়েরপার গ্রামে স্থানীয়দের সাহসী উদ্যোগে একটি বড় ধরনের মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (২১ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে এলাকাবাসী এবং স্হানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় ৯৪ পিস ইয়াবাসহ একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে।

আটক হওয়া ব্যক্তির নাম তাজুল ইসলাম (৩৮)। তিনি রায়টুটি ইউনিয়নের কুড়েরপার গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং তার বাড়িকে একটি মাদক সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালিত হয়, যেখানে তার বাড়ি থেকেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

অভিযানটির নেতৃত্ব দেন রায়টুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক খান মিল্কী। তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন স্থানীয় বিএনপি নেতা হিরন মিল্কী, গ্রাম পুলিশ সদস্য এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। রাতভর অভিযানের ফলে তাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। অভিযান শেষে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ইটনা উপজেলার রায়টুটি ইউনিয়নে গত কয়েক বছর ধরেই মাদক ব্যবসার বিস্তার ঘটেছে। বিশেষ করে ইয়াবা, গাঁজা এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা যুবসমাজের মধ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এলাকার সাধারণ জনগণ বহুবার মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না থাকায় পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছিল।

এই প্রেক্ষাপটে রায়টুটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হক খান মিল্কী সম্প্রতি মাদক নির্মূলে দৃঢ় পদক্ষেপ নেন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে সমন্বয়ে একাধিক অভিযান পরিচালনা শুরু করেন। গতকালের ঘটনাও এই ধারাবাহিক উদ্যোগেরই অংশ।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান এনামুল হক খান মিল্কী জানান, “মাদক একটি সামাজিক ব্যাধি। আমরা চাই না আমাদের প্রজন্ম এই ভয়ঙ্কর নেশার বলি হোক। তাই প্রশাসনের পাশাপাশি জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে।” তিনি আরও জানান, “আমাদের ইউনিয়নে যেখানেই মাদক ব্যবসার খবর পাওয়া যাবে, সেখানে এই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ইটনা থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, “আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ ছিল। এবার তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং মাদক আইনে মামলার প্রক্রিয়া শুরু হবে।”

এদিকে এলাকার সচেতন মহল এই অভিযানে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছেন, এ ধরনের জনসম্পৃক্ত অভিযান মাদকবিরোধী সচেতনতা বাড়াবে এবং ভবিষ্যতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও এ ঘটনায় আশাবাদ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, “আমরা চাই নিরাপদ সমাজ। মাদকের কারণে অনেকেই বিপথে যাচ্ছে। এই অভিযানের মাধ্যমে আমরা একটি সাহসী বার্তা পেয়েছি।”

উল্লেখ্য, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগে এই ধরনের অভিযান আরও বেশি কার্যকর হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Post a Comment

Previous Post Next Post