“ইস, ভৈরবের জন্য যদি কিছু করতে পারতাম”— সেই তাগিদ থেকেই রাজনীতির মাঠে শরিফুল হক জয়

জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব প্রতিনিধি ॥
গোছানো ও সম্ভাবনাময় একটি ক্যারিয়ার ছেড়ে রাজনীতির অনিশ্চিত ও কঠিন পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত খুব সহজ নয়। তবুও ভৈরবের জন্য কিছু করার গভীর তাড়না থেকেই সেই পথ বেছে নিয়েছেন তরুণ রাজনীতিক শরিফুল হক জয়। ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য, নিরাপদ ভবিষ্যৎ কিংবা প্রতিষ্ঠিত জীবনের মোহ নয়—তাঁকে রাজনীতির মাঠে টেনেছে এলাকার প্রতি দায়বদ্ধতা এবং মানুষের জন্য কাজ করার এক ধরনের অন্তর্দাহ।
ভৈরবের এই তরুণ নেতা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় রাজনীতিতে ইতোমধ্যেই আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
শরিফুল হক জয়ের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু খুব বেশি দিনের নয়। তিনি জানান, প্রায় ১৭ মাস আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তাঁর রাজনৈতিক সচেতনতা ও সক্রিয়তা গড়ে ওঠে। সেই আন্দোলনের অভিজ্ঞতা তাঁকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে এবং মানুষের অধিকার নিয়ে ভাবতে শেখায়। পরবর্তীতে তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং সংগঠনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে থাকেন।
তবে দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও ভৈরবের জন্য কিছু করার আকাঙ্ক্ষা তাঁকে বারবার নাড়া দিত। স্থানীয় উন্নয়ন, তরুণদের ভবিষ্যৎ এবং সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বরকে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন তাঁর মনে ক্রমেই দৃঢ় হতে থাকে।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন শরিফুল হক জয়। সেখানে তিনি লেখেন, ভেতরে ভেতরে সব সময় একটি অপূর্ণতা কাজ করত—“ইস, ভৈরবের জন্য যদি কিছু করতে পারতাম।”
এই একটি বাক্যই যেন তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ও মানসিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি। রাজনীতিকে তিনি ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে নয়, বরং একটি দায়িত্ব হিসেবে দেখছেন—এমনটাই বলছেন তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় এনসিপির জোটে যাওয়ার বিষয়টি এবং দলীয় মনোনয়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে শরিফুল হক জয় নতুন করে নিজের অবস্থান নিয়ে ভাবতে বাধ্য হন। ঠিক এই সংকটময় সময়ে তাঁর পাশে দাঁড়ান সহযোদ্ধা তরুণরা। বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী ও আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের সাহস ও অনুপ্রেরণাই তাঁকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সাহস জোগায়।
এই সিদ্ধান্তের পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্রয়োজনীয় সমর্থন সংগ্রহ। কিন্তু অনেকের ধারণাকেও ছাপিয়ে মাত্র দুই দিনের মধ্যেই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। বিষয়টি স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
একঝাঁক স্বপ্নবাজ তরুণকে সঙ্গে নিয়েই এবার কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে মাঠে নামছেন শরিফুল হক জয়। তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার মূল শক্তি হিসেবে কাজ করছে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন।
এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে শরিফুল হক জয় বলেন, “ভৈরবের উন্নয়ন, তরুণদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এবং সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাই আমার রাজনীতির মূল লক্ষ্য। আমি চাই রাজনীতি হোক মানুষের কথা বলার মাধ্যম, নিজের সুবিধা আদায়ের হাতিয়ার নয়।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার চেয়ে মানুষের বিশ্বাস ও দোয়াকেই আমি সবচেয়ে বড় শক্তি মনে করি। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ যদি বিশ্বাস করে পাশে দাঁড়ায়, তাহলে বড় পরিবর্তন সম্ভব।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শরিফুল হক জয়ের মতো তরুণ প্রার্থীদের অংশগ্রহণ নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
স্থানীয় অনেক নাগরিকও বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ভৈরবের উন্নয়ন ও সমস্যা নিয়ে যারা কথা বলবেন—এমন নেতৃত্বের অভাব অনুভূত হচ্ছিল। সেই জায়গা থেকে তরুণদের সামনে নিয়ে আসার উদ্যোগকে তারা ইতিবাচকভাবেই দেখছেন।
সবশেষে শরিফুল হক জয় বলেন, “এই লড়াই একার নয়। ভৈরবের মানুষের দোয়া, ভালোবাসা ও সমর্থনই আমাকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দিচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ পাশে থাকলে ভৈরবের জন্য কিছু না কিছু করাই যাবে।”
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়—ক্ষমতার রাজনীতির চেয়ে দায়িত্বের রাজনীতিতেই নিজেকে দেখতে চান শরিফুল হক জয়। এখন দেখার বিষয়, ভৈরব-কুলিয়ারচরের ভোটাররা তাঁর সেই স্বপ্ন ও প্রত্যাশার কতটা প্রতিফলন ঘটান ব্যালটের মাধ্যমে।

Post a Comment

Previous Post Next Post