জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব প্রতিনিধি ॥
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে চলমান আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের বিশেষ উদ্যোগ অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ–২ এর অংশ হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও ভৈরব বাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. সগীর আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) গভীর রাতে ভৈরব থানা পুলিশের একটি বিশেষ অভিযানকারী দল ভৈরবপুর মধ্যপাড়া এলাকায় তার নিজ বাসভবন থেকে তাকে আটক করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে অপরাধ দমন, সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার ঘোষিত এই বিশেষ অভিযানের আওতায় ভৈরব থানার একটি চৌকস দল গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই মো. সগীর আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত মো. সগীর আহমেদ ভৈরব উপজেলার ভৈরবপুর মধ্যপাড়া এলাকার মৃত আব্দুর সামাদ মোল্লার ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন এবং একসময় ভৈরব বাস মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। রাজনৈতিক ও পরিবহন খাতে তার দীর্ঘ সম্পৃক্ততার কারণে এলাকাজুড়ে তার পরিচিতি রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ–২ এর আওতায় কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় একযোগে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে চিহ্নিত অপরাধী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা। এই অভিযানের অংশ হিসেবেই ভৈরবে মো. সগীর আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ভৈরব এলাকায় বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন, আবার কেউ কেউ ঘটনার বিস্তারিত জানার অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আইন সবার জন্য সমান এবং অপরাধে জড়িত থাকলে রাজনৈতিক পরিচয় কোনোভাবেই বিবেচনায় আনা হবে না।
ভৈরব থানা পুলিশ আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। তার বিরুদ্ধে কী ধরনের অভিযোগ বা মামলা রয়েছে—এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তদন্ত শেষে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল কবির গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, “মো. সগীর আহমেদকে অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ–২ এর আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে অপরাধ দমন এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বিশেষ অভিযান সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও অপরাধ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছে, এ ধরনের অভিযান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তারা আশা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, অপারেশন ডেভিল হান্ট সরকারের একটি বিশেষ আইনশৃঙ্খলা অভিযান, যার মূল লক্ষ্য হলো সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অবৈধ কার্যক্রম ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দমন করে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
Post a Comment