জয়নাল আবেদীন রিটন
ভৈরব প্রতিনিধি ॥
ভৈরবকে পূর্ণাঙ্গ জেলা ঘোষণার দাবিতে আজ আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে ভৈরববাসী। সকাল ১০টার দিকে শত শত মানুষ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে অংশ নেন। শহরের ব্যস্ততম দূর্জয় মোড়ে অবস্থান নিয়ে তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে মুহূর্তেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে উভয়পাশে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়, আর যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকেই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ হাতে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে দূর্জয় মোড়ে জড়ো হন। “ভৈরব চাই জেলা, অন্তর্বর্তী সরকার শুনো—ভৈরবের দাবি মানো”—এমন স্লোগানে পুরো এলাকা মুখর হয়ে ওঠে।
অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন ভৈরব-কুলিয়ারচরসহ আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়নের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
অবরোধ চলাকালীন সময় আন্দোলনকারীদের বক্তব্যে উঠে আসে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও বঞ্চনার কথা। তারা বলেন,
> “ভৈরব দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ কেন্দ্র। এখানে নদী, রেল ও সড়ক—সব ধরনের পরিবহন ব্যবস্থার সংযোগ আছে। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে পিছিয়ে থাকা একটি অযৌক্তিক বিষয়। আমাদের দাবি ন্যায়সঙ্গত—ভৈরবকে জেলা ঘোষণা করতে হবে।”
আন্দোলনকারীরা আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,
> “যদি সরকার আমাদের দাবি না মানে, তবে পরবর্তী ধাপে আমরা রেল, নৌ ও সড়কপথ একযোগে বন্ধ করে দেব। প্রয়োজনে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থবির করে দেওয়া হবে।”
অবরোধের কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ভৈরব-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-সিলেট রুটের যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে। এ সময় যাত্রীদের অনেককে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কেউ কেউ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
অবশেষে পুলিশ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। এরপর ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয় এবং দীর্ঘ লাইনে আটকে থাকা গাড়িগুলো গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেয়।
আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ভৈরব উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান। তিনি বলেন,
> “ভৈরবের জনগণের দাবি যৌক্তিক ও ন্যায্য। ভৈরবকে জেলা ঘোষণা করা সময়ের দাবি। যদি আমাদের দাবি না মানা হয়, তবে শুধু সড়ক বা রেল নয়—ঢাকা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।”
তিনি আরও বলেন, “এই আন্দোলন কোনো দলের নয়—এটি ভৈরববাসীর অধিকার আদায়ের আন্দোলন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে যতক্ষণ না সরকার ভৈরবকে জেলা ঘোষণা করে।”
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে তৎকালীন সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভৈরবকে প্রস্তাবিত জেলা হিসেবে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় তা কার্যকর হয়নি। এরপর থেকে একাধিকবার ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবি উঠলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
এদিকে, আজকের অবরোধ শেষে আন্দোলনকারীরা আগামীকাল (সোমবার) ভৈরব রেলস্টেশনে রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তারা জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচি চলবে।
ভৈরব থানা পুলিশ জানায়, অবরোধ চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি এবং সড়ক থেকে সরে যাওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ভৈরবের জনসাধারণের একটাই স্লোগান—
> “ভৈরবকে জেলা চাই, এখনই চাই!”
Post a Comment