ভৈরব-ময়মনসিংহ রেলপথে ৬ স্টেশন অচল, দুর্ভোগে যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা

জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব থেকে

ভৈরব রেলওয়ে জংশন থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ১৩২ কিলোমিটার রেলপথে মোট ২২টি স্টেশন থাকলেও জনবল সংকটের কারণে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এর মধ্যে ৬টি স্টেশনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কালিকাপ্রসাদ, ছয়সুতি, হালিমপুর, যশোদল, নীলগঞ্জ ও বোকাইনগর—এই স্টেশনগুলোতে থামে না কোনো ট্রেন। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, লোকবল সংকট মেটাতে না পারায় বাংলাদেশ রেলওয়ে বাধ্য হয়ে এসব স্টেশন বন্ধ রেখেছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় কার্যক্রম চালুর আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেই পরিত্যক্ত স্টেশনগুলো হয়ে উঠেছে মাদকসেবীদের আড্ডাখানা ও চোরাচালানকারীদের নিরাপদ আশ্রয়।

ব্যবসায়ীদের লোকসান, যাত্রীদের ভোগান্তি

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, একসময় এসব স্টেশন ব্যবহার করে জুতা, কৃষিপণ্যসহ নানা পণ্য সহজে পরিবহন করা যেত। বিশেষ করে কালিকাপ্রসাদ এলাকায় প্রায় চার হাজার জুতার কারখানার মালামাল রেলপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। এখন ট্রেন থামা বন্ধ থাকায় সব মালামাল সড়ক পথে পাঠাতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা, একই সঙ্গে রেলওয়েও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ব্যবসায়ী আপন হাজারি বলেন, "রেলপথে মাল পাঠাতে পারলে খরচ অর্ধেক হতো। এখন ট্রাক ভাড়া বেশি, আবার অনেক সময় পণ্যও নষ্ট হয়। এতে আমাদের লোকসান হচ্ছে, আর রেলওয়েরও আয় কমছে।"

যাত্রীরা জানান, আগে ট্রেনে সহজে ভৈরব, কিশোরগঞ্জ বা জেলা শহরে যাওয়া যেত। এখন তাদের ভরসা কেবল সড়কপথ। এতে সময় যেমন বেশি লাগছে, তেমনি ব্যয়ও বেড়ে গেছে।

নুরুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, "আমরা পাঁচ বছর ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছি। আগে ট্রেনে সহজে আসা-যাওয়া করতাম। এখন ভাড়া বেশি দিয়ে সিএনজি বা বাসে যেতে হয়।"

নিরাপত্তাহীনতায় স্থানীয়রা

বন্ধ স্টেশনগুলো এখন কার্যত ফাঁকা পড়ে আছে। কোনো স্টেশন মাস্টার বা কর্মচারী নেই। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা স্টেশনের মূল্যবান সামগ্রী চুরি করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদকসেবীরা এখানে নিয়মিত আসর বসায়। ফলে এলাকায় অশান্তি তৈরি হয়েছে।

আব্দুল আওয়াল বলেন, "স্টেশনগুলো বখাটে আর মাদকসেবীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে। সরকার যখন সারা দেশে রেলের উন্নয়ন করছে, তখন ভৈরব-ময়মনসিংহ রেলপথ অবহেলিত থেকে যাচ্ছে।"

রেল কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা

ভৈরব রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার আবু ইউছুফ বলেন, "জনবল সংকটের কারণে ছয়টি স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। লোকবল বৃদ্ধি পেলে ধাপে ধাপে এসব স্টেশনের কার্যক্রম আবার চালু করা হবে।"

এদিকে, স্থানীয়রা বলছেন, অন্তত কিছু ট্রেন যদি বন্ধ স্টেশনগুলোতে দাঁড়ানো যায়, তবে মানুষ অনেকটা স্বস্তি পাবে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের খরচও কমবে।

সোহাগ মিয়া নামে ছয়সুতি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, "২০১৯ সাল থেকে এখানে কোনো ট্রেন থামেনি। স্টেশনটি ভেঙে যাচ্ছে, তবুও দেখার কেউ নেই।"

জরুরি প্রয়োজন কার্যক্রম চালুর

যাত্রী ও ব্যবসায়ী উভয়ের দাবি, দ্রুত এসব স্টেশনের কার্যক্রম চালু করা হোক। কারণ রেলপথে উন্নয়ন হলেও স্থানীয়রা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। এতে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের সুফলও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।

মিলাত মিয়া নামের আরেক স্থানীয় বলেন, "স্টেশনগুলো চালু হলে মানুষ যেমন সুবিধা পাবে, তেমনি রেলওয়ের আয়ও বাড়বে। এখন আমরা কেবল ভোগান্তি আর লোকসানের শিকার হচ্ছি।"

Post a Comment

Previous Post Next Post