ইতালিতে পিকনিকে গিয়ে লেকের পানিতে ডুবে ভৈরবের শম্ভুপুরের শিশুর করুণ মৃত্যু

ইতালিতে পারিবারিক পিকনিকে গিয়ে লেকের পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে ভৈরব উপজেলার শম্ভুপুর গ্রামের ১২ বছর বয়সী বাংলাদেশি শিশু আব্দুস সামাদ রাউফ। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুরে দেশটির উত্তরাঞ্চলের মনোরম মুলভেনো লেকে ঘটে এ মর্মান্তিক ঘটনা।

নিহত রাউফ ইতালিপ্রবাসী আবু বকর সিদ্দিকের একমাত্র ছেলে এবং শম্ভুপুর পাক্কার মাথা এলাকার প্রয়াত আব্দুল সাদেক মেম্বারের নাতি। পরিবারসহ দীর্ঘদিন ধরে সে ইতালিতে বসবাস করছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেদিন ভেনিস শহর থেকে কয়েকটি বাংলাদেশি পরিবার মুলভেনো লেকের পাড়ে পিকনিক করতে যায়। দুপুরে সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়া শেষে অনেকে পানিতে গোসল শুরু করেন। রাউফের পরিবারও পানিতে নামলেও সে তখন পাশেই খেলাধুলা করছিল। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করেই রাউফকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

খবর দেওয়া হলে স্থানীয় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পানিতে তল্লাশি চালান। কিছু সময় পর তারা রাউফকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করেন এবং হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দ্রুত হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হয়।

ইতালিপ্রবাসী ও নিহতের প্রতিবেশী সজীব আল হুসাইন বলেন, “আমরা কয়েকটি পরিবার একসঙ্গে পিকনিক করতে গিয়েছিলাম। দুপুরের পর সবাই পানিতে নামি, কিন্তু রাউফ তখন খেলছিল। হঠাৎ শুনি তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। উদ্ধারকর্মীরা খুঁজে পাওয়ার পরই বুঝলাম অবস্থা গুরুতর।”

এই ঘটনার পর ইতালিতে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে গভীর শোক নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছেন এবং প্রার্থনা করছেন। প্রবাসে বসবাসরতদের জন্য এ ধরনের দুর্ঘটনা শুধু শোকই নয়, বরং পরিবারের জন্য বড় ধরনের মানসিক আঘাতও বয়ে আনে।

স্থানীয়রা বলছেন, লেক, নদী বা সমুদ্রসৈকতের মতো জলাশয়ে পিকনিক বা ভ্রমণের সময় শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সাঁতার না জানা শিশুদের পানির কাছাকাছি যেতে হলেও প্রাপ্তবয়স্কদের নজরদারিতে থাকতে হবে এবং উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

নিহতের গ্রামের বাড়ি শম্ভুপুরে থাকা আত্মীয়রা জানিয়েছেন, রাউফ ছিল পরিবারের সবার প্রিয়। মেধাবী ও প্রাণবন্ত এই শিশুকে হারিয়ে পরিবার ও বন্ধুমহল শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। তার অকাল মৃত্যু এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে।

একটি আনন্দঘন ভ্রমণ এভাবে শোকের ঘটনায় রূপ নেওয়া যে কতটা বেদনাদায়ক—তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। প্রবাসে থাকা পরিবারের জন্য এই ঘটনা এক সতর্কবার্তা হয়ে থাকবে যে, বিনোদনের পাশাপাশি সতর্কতা ও নিরাপত্তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া উচিত।

Post a Comment

Previous Post Next Post