কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় বিএনপির আয়োজিত আনন্দমিছিলে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে হৃদয়বিদারক এক ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে আল আমিন (৪০) নামের এক নেতাকর্মীর। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাকুন্দিয়া বাজার এলাকায় উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় নেতারা জানান, ‘গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে উপজেলা ও পৌর বিএনপির যৌথ উদ্যোগে আনন্দমিছিল বের করা হয়। এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়ন থেকে আল আমিনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে অংশ নেন। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে মিছিল চলাকালে হঠাৎ আল আমিন অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সাথে আরও কয়েকজন নেতাকর্মীও দুর্বল হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাদের পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই আল আমিন মারা গেছেন। তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত গরমে স্ট্রোকের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে বাকি চারজন অসুস্থ নেতাকর্মী বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আল আমিন পাকুন্দিয়া উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়নের রুকন উদ্দিনের ছেলে। তিনি ছিলেন স্থানীয় বিএনপির একজন সক্রিয় সদস্য এবং দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জালাল উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, আমাদের দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী আজকের আনন্দমিছিল চলাকালেই মারা গেছেন। এ ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আজকের সব রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।”
আল আমিনের পিতা রুকন উদ্দিন বলেন, “আমার ছেলে সবসময় রাজনীতিতে আগ্রহী ছিল। সে সকালের পর থেকেই খুব উৎসাহ নিয়ে বের হয়েছিল। কখনো ভাবিনি তাকে এমন অবস্থায় দেখতে হবে।” পরিবার ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, পাকুন্দিয়ায় গত কয়েকদিন ধরেই তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা একজন সুস্থ মানুষের জন্যও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
স্থানীয়দের একাংশ বলছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গরমের মধ্যে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা না থাকায় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট বিএনপি ‘গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়, যার অংশ হিসেবে দেশব্যাপী আনন্দমিছিলের আয়োজন করা হয়। পাকুন্দিয়ায়ও এই দিবস ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু মিছিল চলাকালে ঘটে যাওয়া এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু গোটা কর্মসূচিতে শোকের ছায়া ফেলেছে।
Post a Comment