জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব ॥
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সরকারি প্রণোদনায় বিনামূল্যে পাওয়া পাটের বীজ ব্যবহার করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন অধিকাংশ কৃষক। অন্যদিকে যারা বাজার থেকে বেসরকারি মানসম্মত বীজ সংগ্রহ করে চাষ করেছেন, তারা ভালো ফলন ও বাজারমূল্যে লাভবান হয়েছেন। কৃষকদের অভিযোগ, সরকারি সরবরাহকৃত বীজের মান নিম্নমানের হওয়ায় উৎপাদন কম এবং বাজারে বিক্রির উপযোগিতা নেই।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভৈরব উপজেলায় ২ হাজার ৪ জন কৃষককে উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট চাষে উৎসাহ দিতে বিএডিসি ও পাট অধিদপ্তরের লাল জাতের বীজ সরবরাহ করা হয়। তবে অধিকাংশ কৃষক জানাচ্ছেন, এই বীজ থেকে জন্মানো গাছ হয় খুবই ছোট ও চিকন, ফলে আঁশও হয় নিম্নমানের। অনেকেই এমন বীজ জমিতে না লাগিয়ে ঘরেই রেখে দিয়েছেন।
স্থানীয় কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, “সরকারি বীজে গাছের উচ্চতা হয় মাত্র ৪-৫ ফুট। পাটের আঁশ পাতলা ও শক্তিহীন। বাজারেও এর কোনো চাহিদা নেই।” তিনি জানান, ৩০০ টাকা দামের গরু মার্কা সাদা বীজ থেকে পাওয়া গাছ লম্বা ও আঁশ উন্নত, ফলে বাজারে ভালো দাম মিলেছে।
চরের কান্দা গ্রামের কৃষক আলফাজ উদ্দিন বলেন, “সরকারি বীজ থেকে প্রতি বিঘায় মাত্র ৪-৫ মণ পাট হয়, অথচ বাজার থেকে কেনা সাদা বীজে ফলন ১০-১২ মণ পর্যন্ত হয়।”
কৃষানি চায়না বেগম ও কৃষক রুহুল আমিন জানান, সরকারি বীজে চাষ করে তারা লোকসানে পড়েছেন। অন্যদিকে বেসরকারি বীজে উৎপাদন ও বাজারমূল্য ভালো পাওয়ায় চাষের খরচ উঠিয়ে লাভ করা সম্ভব হয়েছে।
এদিকে, পাট জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানির অভাবেও বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। কৃষক বাচ্চু মিয়া বলেন, “নদীতে পাট জাগ দিতে একজন শ্রমিককে দিতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। এতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে।”
নারী শ্রমিক ফাতেমা জানান, “সরকারি বীজের গাছ চিকন হওয়ায় আঁশ ছাড়াতে অনেক কষ্ট হচ্ছে এবং সময়ও লাগছে বেশি। বেসরকারি বীজে আঁশ ভাল হয়, সহজে ছাড়ানো যায়।”
কৃষি দপ্তরের অবস্থান
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, এ বছর ভৈরবে ৩২০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে, যার মধ্যে কেনাফ জাতের পাট বেশি। কৃষি উপসহকারীরা নিয়মিত মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “ফলন ও দাম ভালো থাকায় আগামী মৌসুমে পাট চাষ বাড়বে।”
উন্নত পাট বীজ প্রকল্পের উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সিহাব উদ্দিন বলেন, “এ বছর তোষা ও রবি-১ জাতের বীজ ২ হাজার ৪ জন কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। কিছু কৃষক লোকসানের কথা জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টি বিএডিসি ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো যাতে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়।” তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যতে উচ্চফলনশীল ও পরীক্ষিত বীজ কৃষকদের মাঝে সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
Post a Comment