নিজস্ব প্রতিবেদক
হোসেনপুর | ৯ আগস্ট ২০২৫
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টার দিকে হোসেনপুর হাসপাতাল মোড়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা এই কর্মসূচির আয়োজন করেন। এতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা ছাড়াও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ নাগরিকরা অংশ নেন। বক্তারা তুহিন হত্যাকাণ্ডকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এ ধরনের ঘটনা একটি মুক্ত সমাজের জন্য গুরুতর হুমকি। তারা অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, একজন সাংবাদিক সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেন, আর সেই কারণে তাকে হত্যা করা মানে জনগণের কণ্ঠরোধের চেষ্টা। তারা সতর্ক করে দেন, যদি দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় না আনা হয়, তবে সাংবাদিক সমাজ কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। স্থানীয় সাংবাদিক নেতা মো. কামরুল হাসান বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের আয়না। তাদের ওপর হামলা ও হত্যা কেবল একজন ব্যক্তিকে নয়, গোটা সমাজকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা তুহিনের পরিবারের প্রতি গভীর সহমর্মিতা প্রকাশ করেন এবং প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানান। তাদের মতে, একজন সাংবাদিক নিহত হওয়ার পর তার পরিবার এক ধরনের আর্থিক ও সামাজিক সংকটে পড়ে। তাই ন্যায়বিচারের পাশাপাশি মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি সেলিনা আক্তার বলেন, আমরা চাই তুহিন ভাইয়ের পরিবার যেন কোনোভাবে বঞ্চিত না হয়। বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা পাশে থাকব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আসাদুজ্জামান তুহিন দীর্ঘদিন ধরে হোসেনপুরসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কাজ করছিলেন। তিনি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য পরিচিত ছিলেন এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে নির্ভীকভাবে লিখতেন। সম্প্রতি কিছু সংবেদনশীল বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই তিনি হুমকির মুখে ছিলেন বলে সহকর্মীরা দাবি করেছেন। এ হত্যাকাণ্ডে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহকর্মী সাংবাদিক, পাঠক এবং সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন এবং ন্যায়বিচারের দাবি তুলছেন।
এ বিষয়ে হোসেনপুর থানার এক কর্মকর্তা জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং অপরাধীদের শনাক্ত করতে তদন্ত চলছে। তবে মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা অভিযোগ করেন, তদন্তের গতি সন্তোষজনক নয়। তারা দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানান। স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা চাই না এই মামলার বিচার বিলম্বিত হোক। অপরাধীরা যত প্রভাবশালীই হোক, তাদের শাস্তি পেতে হবে।
মানববন্ধনে উপস্থিত সাংবাদিকরা জানান, তুহিন হত্যার প্রতিবাদে তারা জেলার বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবেন। প্রয়োজনে জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে রাজধানীতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তাদের মতে, এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হলে ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা পাবে।
তুহিন হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক সমাজে যে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের স্রোত তৈরি হয়েছে, তা থামবে না বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ, সাংবাদিকরা শুধু খবর পরিবেশনের জন্য কাজ করেন না, তারা সমাজের অন্যায়, দুর্নীতি ও অনিয়ম তুলে ধরে জনগণের অধিকার রক্ষায় কাজ করেন। এ কারণে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। বক্তারা মনে করেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট আইন প্রয়োগ এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা জরুরি।
এ মানববন্ধন কেবল একটি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ নয়, এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় এবং সত্য প্রকাশের অধিকার সুরক্ষায় একটি উচ্চকণ্ঠ দাবি হয়ে উঠেছে। সাংবাদিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান প্রমাণ করেছে, সত্যের পথে বাধা আসলেও তারা থেমে থাকবে না। হোসেনপুরের এই কর্মসূচি সারাদেশের সাংবাদিকদের জন্য অনুপ্রেরণার এক প্রতীক হয়ে থাকবে, এমনটাই মত স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের।
Post a Comment