লিবিয়ার মাফিয়া চক্রের হাতে বন্দী কিশোরগঞ্জের দিপু মিয়াজী (২১) কে মুক্তিপণ না দিলে তার জীবন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। চক্রের সদস্যরা নির্যাতনের পর একের পর এক মুক্তিপণ দাবি করছে। নির্যাতনের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর, দিপুর পরিবার চরম বিপদে পড়েছে এবং তারা সরকারের সহায়তা কামনা করছে।
দিপু মিয়াজীর বাবা নুরুল আমিন মিয়াজী জানান, এক বছর ১০ মাস আগে তার ছেলে দিপুকে ইতালি পাঠানোর জন্য স্থানীয় দালাল ফজলুল হকের মাধ্যমে লিবিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। ফজলুল ইতালিতে পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তবে দিপু সেখানে গিয়ে মাফিয়া চক্রের হাতে বন্দী হয়ে পড়েন। লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর থেকেই একাধিকবার তাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বারবার তাকে ফের আটক করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মোট ৩১ লাখ টাকা মাফিয়া চক্রের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে, তবে দিপু এখনও মুক্তি পায়নি।
দিপু মিয়াজী নির্যাতন ও মুক্তিপণের প্রস্তাবের বিস্তারিত জানিয়ে তার পরিবারকে ভিডিও কলে চিঠি পাঠিয়েছেন। এতে দেখা যায়, তার মুখে গামছা বাঁধা এবং তাকে মারধর করা হচ্ছে। সম্প্রতি, একটি মারধরের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর, চক্রটির নতুন দাবি হচ্ছে আরও ২৫ লাখ টাকা। তবে পরিবারের পক্ষে এতো টাকা দেওয়া সম্ভব নয় এবং তারা সরকার থেকে সহায়তা চাচ্ছে।
প্রথমে দিপুকে ইতালি পাঠানোর জন্য ফজলুল হক ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। এরপর, তাকে লিবিয়া পৌঁছানোর পর আরও ২১ লাখ টাকা দিতে হয়। দিপুর বাবা নুরুল আমিন মিয়াজী জানালেন, করোনার সময় তার ব্যবসা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে পরিবারটি বারবার টাকা দেওয়ার পরও আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
ফজলুল হক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়া হয়ে লোক পাঠাচ্ছেন, তার মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার অনেকেই বিপদে পড়েছেন। ফজলুলের ছোট বোন নার্গিস বেগম জানালেন, তার ভাই দিপুকে একাধিকবার উদ্ধার করেছেন এবং বর্তমানে আবারও তাকে মুক্ত করার চেষ্টা করছেন।
দিপু ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর লিবিয়া যান এবং প্রথমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এবং পরে মাফিয়া চক্রের হাতে ধরা পড়েন। প্রথমে ১১ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয় এবং সেই টাকা দেওয়ার পর দিপু ফজলুল হকের কাছে ফিরে যান। পরবর্তী সময়ে, ফজলুল আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করেন, যার পর দিপুকে ইতালি পাঠানোর জন্য আবারও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকে আটকিয়ে রাখা হয় এবং একসময় তাকে আলবেনিয়া পাঠানোর চেষ্টা হলে, সেখানে এক নতুন চক্রের হাতে তিনি বন্দী হয়ে পড়েন। ৫ লাখ টাকা দিয়ে তাকে মুক্ত করা হয়, তারপরেও তাকে ফজলুলের কাছে রাখা হয়।
১৫ জুলাই, ২০২৫ সালে ফজলুল আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করেন এবং পরদিন দিপুকে আটক করে নিয়ে যায়। ২৪ জুলাই থেকে তার পরিবারের কাছে নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো শুরু হয়।
এই বিষয়ে, ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন বলেন, "দিপুর ওপর নির্যাতনের ভিডিওটি আমরা দেখেছি। এই ধরনের ঘটনায় আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। তবে, আমি সব সময় ভাবি—এমন কষ্ট সত্ত্বেও কেন মানুষ এই ঝুঁকি নেয়?"
সরকারের সহায়তা কামনা
এটি একটি উদাহরণ যে, লিবিয়া হয়ে সাগরপথে ইতালি যাওয়া অনেকেই বিপদে পড়ে। দিপুর পরিবার বর্তমানে তার নিরাপদ মুক্তির জন্য সরকারের সক্রিয় হস্তক্ষেপ চায়। তারা আশা করছেন, সরকারি সহায়তার মাধ্যমে দিপুর মুক্তি সম্ভব হবে।
এদিকে, এই ঘটনার পর মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আরও বেশি সচেতনতা সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছে।
Post a Comment