কিশোরগঞ্জ পাগলা মসজিদের দানবাক্সে চিঠি: “নির্বাচন নয়, দরকার ইউনূস সরকার”

কিশোরগঞ্জ পাগলা মসজিদের দানবাক্সে চিঠি: “নির্বাচন নয়, দরকার ইউনূস সরকার”

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলার সময় এবারও নজর কাড়ল একটি চিঠি, যেখানে লেখা ছিল—“নির্বাচন চাই না, আমাদের দরকার ইউনূস সরকার।” শনিবার (৩০ আগস্ট) সকাল ৭টায় মসজিদের ১৪টি দানবাক্স খোলার পর ৩২ বস্তা টাকা, স্বর্ণালংকার ও বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে অসংখ্য চিঠি উদ্ধার করা হয়। এসব চিঠিতে সাধারণ মানুষ তাদের প্রার্থনা, আকাঙ্ক্ষা ও ব্যক্তিগত জীবনের কাহিনি তুলে ধরেন।

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে পাওয়া বিশেষ চিঠিটিতে লেখা ছিল, “হে পাগলা বাবা, তোমার দোয়ার বরকতে নির্বাচন চাই না। আমাদের দরকার ইউনূস সরকার। দোয়া করো যেন নির্বাচন না হয়। দোয়া রহিল—ইতি সাধারণ জনগণ।” চিঠিটি সামাজিক ও রাজনৈতিক আকুতি প্রকাশের কারণে এখন আলোচনায়।

দানবাক্সের কার্যক্রম ও নিরাপত্তা

এবার ৪ মাস ১৮ দিন পর দানবাক্স খোলা হয়েছে। প্রতিবার তিন মাস পর দানবাক্স খোলা হলেও এ বছর দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানের কারণে নতুন করে তিনটি দানবাক্স স্থাপন করা হয়। দানবাক্স খোলার পর মসজিদ কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় টাকার গণনা শুরু হয়।

গণনায় অংশ নেন ৩৪০ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, জেলা প্রশাসনের ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৩৩ জন শিক্ষক ও স্টাফ, ৯ জন সেনা সদস্য, ৩০ জন পুলিশ সদস্য, পাঁচজন আনসার ব্যাটালিয়ন ও ১০ জন আনসার সদস্য। এছাড়া ১০০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীও উপস্থিত ছিলেন।

দেশি টাকার পাশাপাশি স্বর্ণালংকার ও বিদেশি মুদ্রাও গণনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে, সেনা, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের মধ্যে দানবাক্স খোলা হয়।

চিঠির মাধ্যমে মানুষের আবেদন ও আকুতি

দানবাক্সে পাওয়া চিঠিগুলো সাধারণ মানুষের জীবনের নানা দিকের পরিচয় দেয়। কেউ পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আকুতি প্রকাশ করেছেন, কেউ চাকরির প্রত্যাশা জানিয়েছেন। আবার কেউ রোগমুক্তি ও প্রিয়জনের কাছে পৌঁছানোর প্রার্থনা করেছেন। এর পাশাপাশি সমাজে চলমান অনিশ্চয়তা ও ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষাও চিঠিগুলোতে ফুটে উঠেছে।

এবারের চিঠির মধ্যে রাজনৈতিক আকুতি ছাড়াও গ্রামের সাধারণ পুলিশের চিঠি বিশেষভাবে নজর কাড়ে। সেখানে তিনি আল্লাহর কাছে তাঁর প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য দোয়া চান এবং জীবনের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেছেন।

পূর্ববর্তী দানবাক্স খোলার অভিজ্ঞতা

গত ১২ এপ্রিল দানবাক্সগুলো খোলার সময় রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা উদ্ধার হয়েছিল। এর সঙ্গে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা মিলেছিল। পাগলা মসজিদে দান করার মাধ্যমে মুসলমান ছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ আশা পূরণের বিশ্বাসে অংশ নেন।

এছাড়া দানবাক্স খোলার দিন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজাবে রহমত এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সেনা ও আনসার সদস্যরা।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা জানান, পাগলা মসজিদে দান করলে মানুষ আশা করেন যে তাদের প্রার্থনা পূর্ণ হবে। দানবাক্স খোলার সময় চিঠি পড়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা ও সামাজিক সচেতনতার পরিচয় পাওয়া যায়। চিঠিগুলোতে প্রার্থনা, ভালোবাসা, অসহায়ত্ব ও আধ্যাত্মিক আকুতি ফুটে ওঠে।

পাগলা মসজিদের দানবাক্স কেবল অর্থনৈতিক দান নয়, এটি মানুষের হৃদয়ের কথা বলার একটি মাধ্যম হিসেবেও কাজ করছে। প্রতিবার দানবাক্স খোলার সময় মানুষজন চিঠির মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে তাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষা পৌঁছে দেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post