কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী দুইটি ফেরিঘাট—বৈরাগীরচর বাজার ফেরিঘাট এবং কাজিরচর বাজার ফেরিঘাট—সংক্রান্ত একটি গুরুতর অনিয়মের বিষয় নজরে এসেছে। যেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হওয়া উচিৎ এই ফেরিঘাটগুলোকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ইজারা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এ ইজারা মূল্যের টাকা ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক হিসাবের পরিবর্তে একাধিকবার এক ইউপি সদস্যের ব্যক্তিগত পকেটে জমা হয়েছে বলে জানা গেছে।গত বছর অর্থাৎ বাংলা সনে ১৪৩১ বঙ্গাব্দে মসূয়া ইউনিয়ন পরিষদ ওই দুই ফেরিঘাটের ইজারা দেয়। এই ইজারা দেয়ার প্রকল্পের দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসার এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি অজানাই পোষণ করেছেন। এরপরও চলতি বাংলা সন ১৪৩২ তে ইজারা না দিয়েও আগের বছরের ইজারাদাররা ফেরিঘাটগুলো নিজেরাই চালিয়ে যাচ্ছেন।ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক মোবাইল ফোনে জানান, তিনি ফেরিঘাট ইজারা দেয়ার বিষয়ে ইউএনও’র দায়িত্ব সম্পর্কে অনভিজ্ঞান ছিলেন। বিষয়টি জানার পরই ১৪৩২ সনে ইউপি থেকে আর কোনো ইজারা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ফেরিঘাটগুলো এখনো আগের ইজারাদারদের অধীনে রয়েছে, যেখানে ইউপি কোনো টাকা গ্রহণ করেনি।ইউএনও’র কার্যালয়ের অফিস সহকারী নাজির উদ্দিন বলেন, তিনি ফেরিঘাট দুটির ইজারা মূল্য ৮০ হাজার টাকার কথা আগ পর্যন্ত জানতেন না। ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, ফেরিঘাট দুটি তিন থেকে চার হাজার টাকায় ইজারা দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তিনি কাজ শুরু করবেন বলেও জানান।কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাঈদুল ইসলাম জানান, তিনি সম্প্রতি মসূয়া ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শনকালে জানতে পারেন, ফেরিঘাটের ইজারা ইউপি দিয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে তিনি মৌখিক ব্যাখ্যা চেয়েছেন এবং ভবিষ্যতে ইজারা দেয়ার বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তিনি আরও জানান, ইজারার পুরো অর্থ জেলা পরিষদের তহবিলে জমা দিতে হবে।ইউপি সদস্যের পকেটে জমা হয় ফেরিঘাট ইজারার টাকাজানা যায়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দে মসূয়া ইউনিয়ন পরিষদ ফেরিঘাট ইজারার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে। প্রতি ফেরিঘাটের জন্য দু’জন ইজারাদার দরপত্র জমা দেন। বৈরাগীরচর বাজার ফেরিঘাটের সর্বোচ্চ দরদাতা ছিলেন বৈরাগীরচরের লোকমান, যিনি ৬৪ হাজার টাকায় ইজারা পান। আর কাজিরচর বাজার ফেরিঘাটের ইজারাদার নির্বাচিত হন কাজিরচরের শাহীন মিয়া, যিনি ১৬ হাজার ৪০০ টাকায় ইজারা নেন।ইজারা কমিটির সভায়, যা ইউপি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়, সিদ্ধান্ত হয়, ইজারার টাকার সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ১০ শতাংশ আয়কর যুক্ত করে লোকমানকে ৮০ হাজার টাকা এবং শাহীন মিয়াকে ২০ হাজার ৫০০ টাকা জমা দিতে হবে। কিন্তু এই টাকা সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক হিসাবের বদলে ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আশরাফুল আলম পল্লবের কাছে জমা দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।পল্লব ইজারাদারদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করলেও তা ইউনিয়নের ব্যাংক হিসাবের মধ্যে জমা দেননি। এর ফলে ১৪৩১ সনে পুরো বছর দুটি ফেরিঘাট পরিচালনার ফি ইউপি’র ব্যাংক হিসাবের বাইরে থেকে গেছে। ১৪৩২ বঙ্গাব্দেও কোনো ইজারা ছাড়াই ফেরিঘাটগুলো পরিচালিত হচ্ছে।পল্লবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাফর আলী নিশ্চিত করেছেন, গতকাল পর্যন্ত ওই অর্থ ইউপি’র ব্যাংক হিসাবেও জমা পড়েনি।ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পল্লবকে টাকা জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে, তিনি বিষয়টি দ্রুত সমাধান করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
Post a Comment