ভৈরবে হাওরে ৫১৫ কেজি দেশীয় পোনা মাছ অবমুক্ত
ভৈরব সংবাদদাতা
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির উদ্যোগ হিসেবে মুক্ত জলাশয়, হাওর এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি জলাশয়ে অবমুক্ত করা হলো ৫১৫ কেজি দেশীয় জাতের পোনা মাছ। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা মৎস্য দপ্তরের আয়োজনে শ্রীনগর ইউনিয়নের জোয়ানশাহী হাওরে আনুষ্ঠানিকভাবে এ অবমুক্তকরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
এ সময় উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কয়েক প্রজাতির দেশীয় মাছের পোনা হাওরে ছাড়েন কর্মকর্তারা। কর্মসূচিটি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের রাজস্ব খাতের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে বিশেষ উদ্যোগ
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৫ উপলক্ষে “মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশীয় মাছে দেশ গড়ি” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবার ভৈরব উপজেলায় নেয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি। তারই অংশ হিসেবে শ্রীনগর ইউনিয়নের জোয়ানশাহী হাওরে এদিন বিভিন্ন জাতের দেশীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়।
কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন। সভাপতিত্ব করেন শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদ্য যোগদানকৃত সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ এইচ এম আজিমুল হক এবং উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয় বনিক। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
“দেশীয় মাছ রক্ষায় সকলকে দায়িত্ব নিতে হবে” – ইউএনও
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউএনও শবনম শারমিন। তিনি বলেন, “আমরা যদি দেশীয় মাছকে টিকিয়ে রাখতে চাই, তবে পোনা মাছের যত্ন নেওয়া জরুরি। ছোট মাছ ধরা বা হাওরে ক্ষতিকর কার্যক্রম চলতে দিলে এ উদ্যোগ সফল হবে না। মাছগুলোকে বড় হওয়ার সুযোগ দিলে শুধু স্থানীয় মানুষের চাহিদাই মিটবে না, জাতীয় পর্যায়ে দেশীয় মাছে আমরা স্বনির্ভর হতে পারব।”
তিনি আরও জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী খাস, সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জলাশয়গুলোতে এ বছর ৫১৫ কেজি পোনা মাছ অবমুক্ত করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে এসব উদ্যোগ সারা দেশে দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে।
পরিবেশবান্ধব মৎস্যচাষে জোর দিচ্ছে সরকার
সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয় বনিক বলেন, প্রাকৃতিক জলাশয়ে পোনা অবমুক্ত করার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব উপায়ে মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধি সম্ভব। এতে একদিকে যেমন স্থানীয় জনগণ উপকৃত হবেন, অন্যদিকে দেশীয় মাছের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সংরক্ষণও সম্ভব হবে।
তিনি আরও যোগ করেন, বর্তমানে দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সফলতা আনতে হলে স্থানীয় জনগণকেও সচেতন হতে হবে।
স্থানীয়দের প্রত্যাশা
শ্রীনগর ইউনিয়নের জোয়ানশাহী হাওরের আশপাশের সাধারণ মানুষ এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্থানীয় কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, “হাওরে দেশীয় মাছের পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। যদি নিয়মিত এভাবে পোনা ছাড়া হয়, তবে কয়েক বছরের মধ্যেই মাছের প্রাচুর্য ফেরত আসবে।”
অন্যদিকে শিক্ষার্থী সোহেল মিয়া জানান, “দেশীয় মাছের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। তাই এগুলো সংরক্ষণ ও উৎপাদন বাড়াতে সরকারের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।”
পোনা মাছ অবমুক্তকরণের তাৎপর্য
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে মাছ অন্যতম প্রধান উৎস। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত মাছ ধরা ও হাওর-বিলে দখলদারিত্বের কারণে দেশীয় মাছের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এ বাস্তবতায় সরকার নিয়মিত পোনা মাছ অবমুক্তকরণের মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির মাছের টিকে থাকা নিশ্চিত করতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রাকৃতিক জলাশয়ে দেশীয় মাছ অবমুক্ত করলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী মাছের সহজলভ্যতা পাবে, কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে।
সামনে আরও কর্মসূচি
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে শুধু ভৈরব নয়, কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং হাওরাঞ্চলের জলাশয়েও পর্যায়ক্রমে দেশীয় মাছের পোনা ছাড়া হবে। এর মাধ্যমে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে মাছের ঘাটতি অনেকটাই কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
---
Post a Comment