ভৈরবে মধ্যরাতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ, আগুনে পুড়ল ১০ দোকান

ভৈরবে মধ্যরাতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ, আগুনে পুড়ল ১০ দোকান

ভৈরব প্রতিনিধি | ২৫ আগস্ট ২০২৫

কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরে মধ্যরাতে হঠাৎ করে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুটি পক্ষ। এ সময় বাজারের অন্তত ১০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভয়াবহ এ সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

ঘটনাটি ঘটে রোববার (২৪ আগস্ট) রাত আনুমানিক একটার দিকে ভৈরবপুর উত্তর পাড়া ও দক্ষিণ পাড়ার মধ্যে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। আহতদের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।


---

কীভাবে শুরু হলো সংঘর্ষ

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাত ১১টার দিকে ভৈরব বাজারের একটি আবাসিক হোটেল "এশা হোটেল"-এর ঝাড়ুদার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছিলেন। এ সময় ইটের কণা ও ময়লা গিয়ে পড়ে উত্তর পাড়ার এক যুবকের ওপর। এ নিয়ে হোটেল ম্যানেজার ও ঝাড়ুদারের সঙ্গে ওই যুবকের বাকবিতণ্ডা হয়। তর্ক-বিতর্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং উত্তেজনা চরমে ওঠে।

রাত ১২টার দিকে এ বিরোধ ছড়িয়ে পড়ে ভৈরবপুর উত্তর পাড়া ও দক্ষিণ পাড়ায়। উত্তর পাড়ার "ওমান গ্রুপ" ও দক্ষিণ পাড়ার "কসাই হাটি" গ্রুপ একে অপরের মুখোমুখি হয়। মনমরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী চলে সংঘর্ষ।


---
লাঠিসোঁটা থেকে ককটেল বিস্ফোরণ

উভয় পক্ষের যুবকরা লাঠি-সোঁটা, দা-বল্লমসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এমনকি একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে, যা এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সংঘর্ষে দোকানপাট ভাঙচুর ছাড়াও ১০টির বেশি দোকানে আগুন দেওয়া হয়।


---

আগের সংঘর্ষের রেশ

স্থানীয়রা জানান, এর আগে মাত্র এক মাস আগে ভৈরব পৌরসভার চণ্ডিবের পশ্চিম পাড়া ও পাগলাবাড়ি এলাকার মধ্যে অটোরিকশা আটকানোর জেরে তিন ঘণ্টা ব্যাপী সংঘর্ষ হয়েছিল। সে সময়ও ব্যাপক ভাঙচুর ও অন্তত ৩০ জন আহত হন। ফলে ধারাবাহিকভাবে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।


---

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা

রাতভর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা চালালেও পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা এসে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ভোরের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

ভৈরব থানার ওসি গণমাধ্যমকে জানান, এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে পুনরায় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল না হয়।


---

ক্ষতিগ্রস্তদের আহাজারি

সংঘর্ষে দোকান পুড়ে যাওয়া ব্যবসায়ীরা এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, হঠাৎ করে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় তাদের দোকানপাট লুটপাট হয় এবং আগুনে পুড়ে যায়। এক দোকানির আর্তি— “রাতের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেল, আমাদের জীবন চালানোর উপায় নেই।”


---

আতঙ্কে স্থানীয়রা

ঘটনার পর থেকে ভৈরবপুর এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ রাতের অঘটনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post