কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় ঘটে যাওয়া এক সহিংস ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সরকারি বাসভবন। স্থানীয় সময় বুধবার (১৩ আগস্ট) রাতে হাফেজ আব্দুর নূর নামে এক ব্যক্তি পুলিশি অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে দুইশর বেশি লোককে আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ইটনায় নতুনভাবে নির্মিত মিনি স্টেডিয়ামের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে ইউএনওকে সভাপতি করে একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। তবে কিছু সময় পরই স্থানীয় এক অংশের লোকের নেতৃত্বে পাল্টা কমিটি সেখানে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। ইউএনও’র কাছে পৌঁছানো তথ্য অনুযায়ী, খেলার আড়ালে সেখানে অনৈতিক ও জুয়ার ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইটনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাফর ইকবালকে অবহিত করা হয়। পরে ওসি সরেজমিনে মাঠ পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে দেন এবং এমন কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
তবে এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বুধবার সন্ধ্যার দিকে প্রায় দুইশরাধিক ব্যক্তি উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করে হামলা চালায়। তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বাসভবন ভাঙচুরের চেষ্টা করে। হামলার সময় ইউএনও বাসায় উপস্থিত ছিলেন না, তবে বাসায় ছিলেন তার স্ত্রী ও সন্তানরা। এ ঘটনায় দুজন আনসার সদস্য ও পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন।
ইটনা থানায় দায়ের করা মামলায় ৪০ জনের নাম উল্লেখ করা হলেও, আসামির সংখ্যা দুইশরও বেশি। মামলাটি দায়ের করেছেন ইউএনও’র নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা একজন আনসার সদস্য। গ্রেফতারকৃত হাফেজ আব্দুর নূর হলেন মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি খুরশীদ হাজীর ছেলে।
ইটনা থানার ওসি মো. জাফর ইকবাল এই ঘটনায় নিশ্চিত করে বলেন, "হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মামলা হয়েছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।"
ইউএনও মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, "আমি এই হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত। আমাদের পরিবারের জন্য এটি আতঙ্কজনক মুহূর্ত ছিল। এমন ঘটনা ৫ আগস্টের আগে আমাদের উপজেলায় কখনো ঘটেনি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, ইটনা উপজেলা ছাত্রদল ও যুবদলের কয়েকজন নেতাকর্মী হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।"
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসভবনের তত্ত্বাবধানে দ্রুত মেরামতির কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা হবে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই ইউএনও’র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের তৎপরতা এবং স্থানীয় নেতাদের দায়িত্বশীল আচরণের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
আইনপ্রণেতা ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলে এমন সহিংসতা পুনরায় ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
এই ঘটনার প্রভাব এলাকার জনজীবনেও পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা আতঙ্কে রয়েছেন। বাজারে ও জনসাধারণের চলাচলে প্রভাব পড়েছে। প্রশাসন ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শেষে আস্থা ফিরিয়ে দিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ইটনা উপজেলার এই হামলার ঘটনা দেশের অন্যান্য জেলার কর্মকর্তাদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রশাসন আশা করছে, তদন্ত শেষে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে আইনশৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হবে।
Post a Comment