কিশোরগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত ৪৫, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে

কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার খয়েরপুর-আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাপুর গ্রামে দলটির দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৪৫ জন। সংঘর্ষের সময় সংঘটিত হয়েছে লুটপাট, বাড়িঘর ভাঙচুর এবং বাড়িতে অগ্নিসংযোগের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাও।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় বিএনপি নেতা কামাল পাশা ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ আহমেদের মধ্যে রাজনৈতিক ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এই বিরোধ ক্রমশ ঘনীভূত হয়ে মঙ্গলবার সকালে রূপ নেয় সহিংসতায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকাল বেলা হঠাৎ কামাল পাশার অনুসারীরা ফরহাদ আহমেদের গ্রাম বাঘাবাড়িতে গিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়।

হামলার জেরে দুই পক্ষের মধ্যে টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে সংঘর্ষ, যেখানে দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল ব্যবহার করা হয়। একপর্যায়ে কামাল পাশা সমর্থিত লোকজন ফরহাদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়, ঘরে লুটপাট করে এবং একটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ৪৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ফরহাদ আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমি গত দুই দিন কিশোরগঞ্জ শহরে ছিলাম। আমাদের দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় হওয়ার পর থেকেই কামাল পাশা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছেন। আজ সকালে পরিকল্পিতভাবে শতাধিক লোক নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা করে। আমাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করে তারা। অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছেন আমাদের পক্ষের।”

অপরদিকে, কামাল পাশা তার বক্তব্যে পাল্টা অভিযোগ এনে বলেন, “গতকাল ও আজ সকালে আমি একটি খেলার মাঠ পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। পথে বাঘাবাড়ির কাছাকাছি এলাকায় গেলে ফরহাদ গ্রুপের লোকজন আমার ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। পরে আমার সমর্থকেরা এসে আমাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আমাদের পক্ষেরও প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন।”

অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন জানান, ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে এবং পুনরায় যাতে সহিংসতা না ঘটে, সেজন্য এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেসব পক্ষ অভিযোগ করেছেন, তারা লিখিত অভিযোগ দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে এ ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে, যা সমাজে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ ও বিচার দাবি করেছেন।

উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিবেশ দীর্ঘদিন ধরেই উত্তপ্ত। বিশেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব প্রায়শই সহিংসতার জন্ম দেয়। সাম্প্রতিক এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে মতানৈক্য কীভাবে জনজীবনকে অশান্ত করে তুলতে পারে।

অবিলম্বে তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত না করা হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের সহিংসতা ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।#কিশোরগঞ্জ #বিএনপিসংঘর্ষ #রাজনৈতিকসহিংসতা #অষ্টগ্রাম #বাংলাদেশসংবাদ #রাজনীতি

Post a Comment

Previous Post Next Post