ভৈরবে প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিতের ঘটনায় যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার, এলাকাজুড়ে ক্ষোভ ও স্বস্তি

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগে যুবলীগ নেতা মো. আজিম রানা ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত ব্যক্তি গজারিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং পূর্বকান্দা গ্রামের বাসিন্দা মো. এলাছ উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে।

ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানা গেছে, অভিযুক্ত আজিম রানা গত ২৯ জুন, রোববার দুপুরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে অফিস কক্ষে প্রধান শিক্ষক একেএম মাসুদকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। এরপর হঠাৎ করে তার ওপর শারীরিক হামলা চালায়। অভিযোগ অনুযায়ী, আজিম রানা প্রধান শিক্ষকের শার্টের কলার ধরে গলা চিপে ধরে মারধর করে। এমন হঠাৎ ও অপ্রত্যাশিত হামলার ঘটনায় শিক্ষক ও সহকর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, অভিযুক্ত দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের ভিতরে দপ্তরির কক্ষে জোরপূর্বক প্রবেশ করে মাদক সেবন করতো। বিদ্যালয়ের পানি ট্যাংক থেকে অনুমতি ছাড়া পাইপ সংযোগ দিয়ে পুকুরে পানি দেয়ায় স্কুলের একমাত্র পানি পাম্প পুড়ে যায়। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকরা একাধিকবার আপত্তি জানালেও সে কোনো তোয়াক্কা না করে বরং আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

আজিম রানার বিরুদ্ধে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার মায়ের কাছে নালিশ করলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষকের ওপর সরাসরি হামলা চালায়। ঘটনার পর শিক্ষা অফিসার এবং থানায় জানানো হলে পুলিশ এসে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে। ঘটনার রাতে ভুক্তভোগী শিক্ষক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আজিম রানা পলাতক ছিলেন। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ৭ জুলাই সোমবার রাতে বাজিতপুর উপজেলার মাইজচর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, “প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। অভিযুক্ত আজিম রানাকে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে এবং আজ (৮ জুলাই) তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজিম রানা একজন চিহ্নিত মাদকসেবী এবং দুর্বৃত্ত। তার বিরুদ্ধে আগেও বিভিন্ন অপরাধে মামলা হয়েছে। এমনকি তার ভাই মাসুদ ভূঁইয়াও সম্প্রতি ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়। এলাকার মানুষ তাদের নানা অপরাধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।

ঘটনার পর পুরো উপজেলায় শিক্ষক মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ভৈরব উপজেলার ৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে পুলিশের কার্যকর পদক্ষেপে শিক্ষক সমাজ ও অভিভাবক মহলে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ভৈরব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার এই ঘটনায় পুলিশের দ্রুত অভিযানের প্রশংসা করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।#KishoreganjNews #কিশোরগঞ্জসংবাদ #ভৈরবসংবাদ #প্রাথমিকশিক্ষা #শিক্ষকনির্যাতন #YouthPoliticsBangladesh

Post a Comment

Previous Post Next Post