বিপ্লবের রাজপথ থেকে পঙ্গুত্ব—জুলাই ঘটনার সেই কিশোরগঞ্জের তরুণ আজ জীবনের লড়াইয়ে পরাজিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, কিশোরগঞ্জ:
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ নয়াপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া হাফেজ মাওলানা জুনায়েদ আহমদ আজ জীবনসংগ্রামের এক করুণ প্রতীক। প্রতিবন্ধী বাবার একমাত্র সন্তান জুনায়েদ পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। টিউশনি করে নিজে পড়তেন এবং সংসারের চাকা সচল রাখতেন। কিন্তু ২০২৪ সালের ‘জুলাই বিপ্লব’—যা ঢাকার রাজপথ কাঁপিয়েছিল, সেখানেই এক মর্মান্তিক ঘটনায় তিনি হারান নিজের একটি পা। সেই থেকেই যেন থেমে গেছে তার জীবনের গতিপথ।

জুনায়েদের জীবন ছিল কঠিন, কিন্তু আত্মমর্যাদায় ভরা। ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত টিউশনি করতেন। তার কাঁধেই ছিল পরিবার চালানোর সম্পূর্ণ ভার। কিন্তু ৫ আগস্টের দুপুরে শাহবাগ-গণভবন ঘেরাওয়ের ডাক পাওয়া কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে যে মুহূর্তে রাস্তায় নামেন, তখনই তার জীবনে নেমে আসে এক অন্ধকার অধ্যায়।

গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জুনায়েদ জানান, “মাদরাসার কয়েকজন বন্ধু মিলে রওনা হয়েছিলাম কর্মসূচিতে যোগ দিতে। পথে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হলে, আমরা একটি ভ্যানের পেছনে আশ্রয় নিই। কিছুক্ষণ পর পুলিশ আমাদের খুঁজে পায়। আমি দৌঁড় দিতে গিয়েই পুলিশের গুলিতে আহত হই। পরে স্থানীয় লোকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অপারেশনের সময় চিকিৎসকরা বাধ্য হন আমার পা কেটে ফেলতে।”

একজন সাহসী তরুণের এমন করুণ পরিণতি শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্যই এক দুঃখজনক উদাহরণ। নিজের সব স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে দেশের জন্য রাজপথে দাঁড়ানো জুনায়েদ বলেন, “আমি জাতির জন্য যা পেরেছি করেছি। এখন আমার পা নেই, কাজও নেই। সংসার চালানো তো দূরের কথা, নিজের খরচও জোগাতে পারছি না।”

তার বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, “আমি শারীরিকভাবে অক্ষম। কোনো কাজ করতে পারি না। আমার ছেলেই ছিল ভরসা। এখন সে পঙ্গু। সহায়তা না পেলে আমরা খাবারও পাই না। দিন চলে না।”

এ বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিক আমিনুল হক সাদী বলেন, “জুনায়েদের পরিবার এখন একেবারে নিঃস্ব। সরকারের উচিত এমন একজন সংগ্রামী তরুণের পাশে দাঁড়ানো। আমরা চাই, তাকে যেন দ্রুত পুনর্বাসন করা হয়।”

জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান গণমাধ্যমকে জানান, “জুনায়েদের জন্য আর্থিক সহায়তা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত তাকে একটি চাকরির আওতায় আনা হবে। জেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।”

জুলাই বিপ্লবের মত ঘটনার মূল্য যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, জুনায়েদের জীবনই তার প্রমাণ। এক সময় যে ছেলে নিজের হাতেই সংসার চালাত, আজ সে সহায়তার আশায় দিন গুনছে। সরকার ও সমাজের উচিত তার মতো সাহসী তরুণদের পাশে দাঁড়িয়ে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে দেওয়া।

#কিশোরগঞ্জসংবাদ #জুলাইবিপ্লব #জুনায়েদআহমদ #পুলিশগুলিকাণ্ড #KishoreganjNews #Kishoreganjsongbad

Post a Comment

Previous Post Next Post