ভৈরবে সাংবাদিক সোহেলুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা, অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ী শাহিন

ভৈরবে সাংবাদিককে হত্যার চেষ্টা: অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ী শাহিন, এলাকায় তীব্র প্রতিবাদ
জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব || ২৯ জুলাই ২০২৫

কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলায় এক পেশাদার সাংবাদিকের ওপর প্রকাশ্যে হত্যার চেষ্টা চালানোর ঘটনা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। দৈনিক দিনকাল পত্রিকার ভৈরব প্রতিনিধি এবং ভৈরব প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব সোহেলুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে স্থানীয়ভাবে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারী শাহিন। ঘটনার পর সাংবাদিক মহলসহ সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

ঘটনার বিবরণ

প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে ভৈরবপুর মধ্যপাড়া এলাকায় সাংবাদিক সোহেলুর রহমান তার বাসা থেকে বের হয়ে ওষুধ কিনতে জান্নাত ফার্মেসিতে গেলে সেখানে ওঁত পেতে থাকা শাহিন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। তবে উপস্থিত সাধারণ মানুষ দ্রুত এগিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং সাংবাদিক সোহেলুরকে রক্ষা করে। হামলাকারী শাহিন সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

এই ঘটনায় ভৈরব থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাব-১৪ (সিপিসি-২), ভৈরব সেনা ক্যাম্প, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারের বরাবর অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

ফেসবুক পোস্ট থেকেই শুরু উত্তেজনা

সাংবাদিক সোহেলুর রহমান জানান, ঘটনার মূল সূত্রপাত হয় ২৮ জুলাই রাতে তার ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্ট থেকে। ওই পোস্টে তিনি শাহিনের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ তুলে ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তাকে গ্রেফতারের আহ্বান জানান। এ পোস্টের পর রাতেই শাহিন ও তার সহযোগীরা সোহেলুর রহমানের বাসার সামনে গিয়ে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

সোহেল বলেন,

> “আমি দীর্ঘদিন ধরে ভৈরবে মাদক ও অপরাধবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। শাহিন একজন কুখ্যাত অপরাধী। জেল থেকে জামিনে বের হয়ে আবার সে মাদক ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে। আমি তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কারণেই সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।”



সাংবাদিক মহলের তীব্র নিন্দা

এই ঘটনায় সাংবাদিক সমাজসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভৈরব প্রেস ক্লাব, টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বিএমইউজে ভৈরব শাখা এবং অন্য কয়েকটি সংগঠন যৌথ বিবৃতি দিয়ে শাহিন ও তার মদদদাতাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে।

তারা বলেন,

> “একজন সাংবাদিক তার সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি জীবন নিয়ে শঙ্কায় থাকেন, তাহলে তা দেশের গণমাধ্যম স্বাধীনতার জন্য ভয়ংকর হুমকি।”



পুলিশ প্রশাসনের আশ্বাস

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার মো. ফুয়াদ রোহানী সাংবাদিকদের জানান,

> “আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অপরাধীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি

জানা গেছে, এ ঘটনার পর থেকে সাংবাদিক সোহেলুর রহমানের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত শাহিনের গতিবিধি নজরদারিতে রেখেছে র‍্যাব ও পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

Post a Comment

Previous Post Next Post