ভৈরবে আবর্জনার স্তূপে জনদুর্ভোগ চরমে, প্রশ্নের মুখে পৌরসভার ভূমিকা

ভৈরব প্রতিনিধি: জয়নাল আবেদীন রিটন


কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরে আবর্জনার স্তূপ এখন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার বড় প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হয়েছে। শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশে দিনের পর দিন জমে থাকা ময়লার দুর্গন্ধে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে পথচারী ও যাত্রীদের। পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি আবর্জনা কেন্দ্র করে ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগবালাই, আর স্থানীয়দের অভিযোগ—এ অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা।

স্টেশন রোডেই ভাগাড়, পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের অন্যতম ব্যস্ত ভৈরব রেলস্টেশন রোডের পাশে পলাশ মোড়ে প্রতিদিন ৩০-৪০ টন ময়লা ফেলা হয়। এই সড়ক দিয়েই চলাচল করে হাজারো রিকশা, অটোরিকশা এবং সাধারণ মানুষ। সড়কের পাশে অবস্থিত রেলওয়ের একটি বড় পুকুর এখন প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভরাট হয়ে গেছে আবর্জনায়।

পথচারীরা জানান, সড়ক দিয়ে হেঁটে যেতে গেলে নাক-মুখ চেপে চলাফেরা করতে হয়। দুর্গন্ধে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। স্থানীয় নর্থ সাউথ কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাস করা হয়ে পড়েছে প্রায় অসম্ভব। শিক্ষকেরা বলছেন, শিশুরা ঘনঘন বমি করছে, কারো কারো মধ্যে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জিসহ বিভিন্ন রোগ।

স্থানীয়দের ক্ষোভ ও উদ্বেগ

পথচারী রহিম মিয়া, সুবোধ সরকার ও আল-আমিন জানান, “এই এলাকায় প্রতিদিন কাজের জন্য আসতে হয়। পলাশ মোড় এলাকায় এমন দুর্গন্ধ যে দাঁড়িয়ে থাকা দায়। পৌরসভা এত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কীভাবে ময়লা ফেলে, বুঝে আসেনা।”

ভৈরব রেলস্টেশন থেকে নেমে আসা যাত্রী আব্দুল কুদ্দুস ও রুহুল আমিনের ভাষ্য, “এটি রুচির অভাব ছাড়া আর কিছু নয়। শহরের সৌন্দর্য রক্ষা করা তো পৌরসভারই দায়িত্ব।”

স্থানীয় কাউসার আহমেদ বলেন, “এভাবে ময়লা ফেলে ভৈরবকে অরুচিকর শহরে পরিণত করছে কর্তৃপক্ষ। নির্জন কোনো স্থানে ডাম্পিং স্টেশন করলেই সমাধান সম্ভব।”

স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের করুণ চিত্র

নর্থ সাউথ কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের কয়েকজন শিক্ষিকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমাদের স্কুলের পাশেই ময়লা ফেলা হচ্ছে। দুর্গন্ধে ক্লাস নেয়া প্রায় অসম্ভব। ছাত্রছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আমরা দ্রুত অন্যত্র ডাম্পিংয়ের দাবি জানাচ্ছি।”

শিক্ষার্থী তুহিন ও মারিয়া জানায়, “ময়লার গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। স্কুলে বসে থাকতে ভয় লাগে। পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে গেছে।”

ভূমি দখলের আশঙ্কা

এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, “এই জায়গায় পরিকল্পিতভাবে ময়লা ফেলে ভরাট করে ভূমি দখলের পথ তৈরি করা হচ্ছে। কোনো গোপন উদ্দেশ্য ছাড়া এমনভাবে জায়গা ভরাট সম্ভব নয়।”

পৌর কর্তৃপক্ষের দায় এড়ানোর চেষ্টা

পরিচ্ছন্নকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা কেবলমাত্র কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন করছেন। পলাশ মোড় ও বাগানবাড়ি এলাকার রেলওয়ের পরিত্যক্ত ভূমিতেই প্রতিদিন ময়লা ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়।

প্রশাসনের আশ্বাস

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন জানান, “ভৈরব পৌরসভায় একটি নির্দিষ্ট ময়লা ফেলার স্থান তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করে নির্জন স্থানে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। জমি কেনার প্রক্রিয়া চলমান। এটি শেষ হলেই ময়লা অপসারণের কাজ শুরু হবে, তখন পৌরবাসীর এই ভোগান্তি কমে যাবে।”

Post a Comment

Previous Post Next Post