বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে রাজধানীর উত্তরার নিজ বাসা থেকে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার (২২ জুন) বিকেলে উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের বাসভবন থেকে তাঁকে তুলে নেওয়া হয়। ঘটনার সময় তাঁর বাসার আশপাশে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়, যা পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ প্রাথমিকভাবে তাঁকে আটক করে এবং এরপর তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মামলা কিংবা গ্রেপ্তারের তথ্য জানানো হয়নি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একদল লোক হঠাৎ করে কে এম নূরুল হুদার বাসায় গিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। এ সময় তাঁকে উদ্দেশ করে ডিম ছোড়া হয় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং তাঁকে বাসা থেকে সরিয়ে থানায় নিয়ে যায়।
ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উত্তেজনার একটি পরিপ্রেক্ষিত রয়েছে। একই দিনে দুপুরে বিএনপির পক্ষ থেকে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলার আবেদন করা হয়, যেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়িত্ব পালন করা তিনজন সাবেক সিইসির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। মামলার অভিযোগে নির্বাচন ব্যবস্থার পক্ষপাতিত্ব ও ভোট কারচুপির বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। এই আবেদনের কয়েক ঘণ্টার মাথায় কে এম নূরুল হুদার বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে।
কে এম নূরুল হুদা ২০১৭ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তাঁর নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচন নিয়ে তখন থেকেই ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা রয়েছে। বিএনপি শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছে, নির্বাচনের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছিল এবং প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছে।
বিএনপি আরও দাবি করে, নূরুল হুদা রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হন এবং একটি একতরফা নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করেন, যা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল। এ কারণেই তাঁর এবং অন্য দুই সাবেক সিইসির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে, এবং নির্বাচন কমিশন ও অতীত নির্বাচনগুলো ঘিরে জনমনে যে ক্ষোভ আছে, তা বিভিন্নভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। তবে একজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে এমন আচরণ এবং তাঁকে জনতার হাতে হেনস্তা করা গণতান্ত্রিক সমাজে গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।
এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি যে, কে এম নূরুল হুদাকে আসলে কেন আটক করা হয়েছে বা তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা রয়েছে কিনা। তবে গোয়েন্দা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হয়তো পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনাটি সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক পক্ষগুলো ইতোমধ্যেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছে। একদিকে বিএনপি এই ঘটনাকে "জনরোষের বহিঃপ্রকাশ" হিসেবে ব্যাখ্যা করছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে।
পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটি সময়ই বলবে। তবে কে এম নূরুল হুদার আটকের ঘটনাটি দেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে আবারও।#নূরুলহুদা #সাবেকসিইসি #আটক #উত্তরা #বিএনপি #নির্বাচনকমিশন #রাজনীতি #ঢাকানিউজ #বাংলাদেশ_রাজনীতি #BreakingNews #PlagiarismFree #SEOFriendly
Post a Comment