ভৈরবে মোবাইল চুরির অভিযোগে যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতন, মাথা ন্যাড়া করলেন ইউপি সদস্য

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে এক যুবককে গাছে বেঁধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন নাগরিকরা।

ভুক্তভোগী যুবকের নাম ইমন মিয়া (২২)। তিনি ভৈরব পৌর এলাকার কালিপুর রামশংকরপুরের রউফ মিয়ার ছেলে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ইমনকে মোবাইল চুরির সন্দেহে আটক করে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয় টানা তিনদিন। এর মধ্যে তার মাথার অর্ধেক চুল কেটে দেওয়া হয়, যা একজন মানুষের মর্যাদা ও মানবাধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার (২১ জুন) দুপুরে, ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের শ্রীনগর গ্রামে। এই এলাকায় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং একই ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে এই অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৮ জুন) স্থানীয় কিছু লোকজন ইমনকে আটক করে মোবাইল চুরির অভিযোগে সরাসরি ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিনের কাছে নিয়ে যান। এরপর জামাল উদ্দিনের বাড়ির আঙিনায় একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয় ইমনকে। এসময় এলাকার কিছু যুবকের সহায়তায় ইমনের মাথার অর্ধেক চুল কেটে দেওয়া হয়। এমন অবস্থায় তিনদিন ধরে রাখা হয় তাকে।

এলাকাবাসীর কেউ একজন বিষয়টি পুলিশকে জানালে শনিবার দুপুরে ভৈরব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহাদাৎ হোসেন ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং নির্যাতনের শিকার যুবককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, “ঈদের তিন দিন আগে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি চুরি হয়। পরে জানতে পারি, আরও কয়েকজনের ঘর থেকেও মোবাইল চুরি হয়েছে। এলাকাবাসীর সন্দেহে ইমনকে আটক করা হয়। চোর চক্রের বাকি সদস্যদের শনাক্তের জন্য স্থানীয়রা তাকে ধরে রেখেছিলেন। পরে আমরা পুলিশে হস্তান্তর করেছি।”

তবে স্থানীয়দের দাবি, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে জামাল উদ্দিন যে ভূমিকা রেখেছেন, তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং একজন সাধারণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের সামিল।

ভৈরব থানার আরেক কর্মকর্তা এসআই এহসানুল কবির গণমাধ্যমকে জানান, “আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ইমনকে উদ্ধার করেছি। তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

এ ঘটনায় মানবাধিকারকর্মীরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, একজন সন্দেহভাজন অপরাধী হলেও তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কাউকে গাছে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা আইনবহির্ভূত এবং তা মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন।

স্থানীয়দের মতে, জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব হচ্ছে জনসেবা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া নয়। এ ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও বাড়বে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

এদিকে ইমনের পরিবারও ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি করেছে। তারা জানিয়েছে, ইমন কোনো চুরির সঙ্গে জড়িত নয় এবং তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। এ বিষয়ে তারা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তারা সাধারণ জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন—কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিতে, নিজেদের হাতে বিচার না করতে।

এ ঘটনার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, দেশের গ্রামাঞ্চলে এখনো আইনের চেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও স্থানীয় রাজনীতির প্রভাব কিভাবে সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তোলে।#ভৈরব #মোবাইলচুরি #নির্যাতন #যুবলীগ #আইনশৃঙ্খলা #বাংলাদেশনিউজ #মানবাধিকার

Post a Comment

Previous Post Next Post