জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব:
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে শ্বশুরের ছুরিকাঘাতে জামাই গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তির নাম সাকিব (৪০)। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। পরে অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সোমবার (তারিখ উল্লেখযোগ্য) সকাল ৯টার দিকে দুই নারী একজন আহত পুরুষকে নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রেজিনা পারভিন জানান, রোগীর হৃদস্পন্দন ও পালস মিলছিল না এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটায় তাৎক্ষণিকভাবে দুই লিটার সেলাইন পুশ করে রক্তচাপ কিছুটা স্বাভাবিক করা হয়। এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়।
তদন্তে জানা যায়, ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুরের জরুরমোড় এলাকার বাসিন্দা জসিম মিয়ার মেয়ে ঝর্ণার সঙ্গে প্রায় এক দশক আগে বিয়ে হয় সাকিবের। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তবে সুখের সংসার বেশিদিন টেকেনি।
ঝর্ণার মা রুমা বেগম জানান, সাকিব ছিলেন একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি এবং কোনো ধরনের উপার্জনে যুক্ত ছিলেন না। প্রায় সময় স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। এসবের প্রেক্ষিতে ঝর্ণা এক বছর আগে সাকিবকে তালাক দেন। তবুও সাকিব বারবার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করতেন বলে অভিযোগ তাদের।
ঘটনার দিন সকালে সাকিব শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ঝর্ণাকে না পেয়ে শাশুড়ির সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং গালিগালাজ শুরু করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠলে খবর পেয়ে ঝর্ণার বাবা জসিম মিয়া বাড়িতে আসেন। তখন সাকিবের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়, যা একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। সেই সময় জসিম মিয়া তার জামাই সাকিবকে ছুরিকাঘাত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ছুরিকাঘাতে আহত সাকিব মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয় কয়েকজন নারী তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তবে ঘটনাস্থলে বা হাসপাতালে তার পরিবারের কোনো সদস্য উপস্থিত ছিলেন না।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শক্তিমৃধা বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে আমরা দ্রুত সেখানে পৌঁছাই। সাকিবের সাবেক স্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। আহত ব্যক্তির পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
এদিকে এলাকাবাসীর মাঝে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কেউ বলছেন, এটি আত্মরক্ষার্থে ঘটেছে, আবার কেউ একে পরিকল্পিত হামলা হিসেবে দেখছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখছে।
এই ঘটনায় সাকিবের পরিবার এখনো মুখ খুলেনি। তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়, তিনি ঢামেক হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন এবং অবস্থা স্থিতিশীল নয়।#ভৈরব #ছুরিকাঘাত #পারিবারিক_সহিংসতা #আহত #ঢাকা_মেডিকেল
Post a Comment