কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়ার বড়মাইপাড়া এলাকায় বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন ২০২৫) ভোর ৫টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
সখিনা বেগমের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেছেন তাঁর ভাগনি ফাইরুন্নেছা আক্তার, যিনি শেষ সময় পর্যন্ত তাঁকে সেবা করে গেছেন। ফাইরুন্নেছার ছেলে কাওসার মিয়া জানান, আজ আসরের নামাজের পর নিকলী উপজেলার গুরুই মাঠে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে এবং গুরুই কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হবে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিকলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রেহানা মজুমদার।
সখিনা বেগম ছিলেন একাত্তরের রণাঙ্গনের অন্যতম সাহসী নারী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল অধ্যুষিত নিকলী উপজেলার গুরুই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্বামী কিতাব আলীর মৃত্যু হয় মুক্তিযুদ্ধের আগেই, এবং নিঃসন্তান সখিনা পরবর্তীতে ভাগনির কাছে চলে আসেন। সেখানেই জীবনের শেষ দিনগুলো কাটান।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর সখিনা বেগম সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। শুধু রান্না করে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করাই নয়, বরং শত্রুর গতিবিধির তথ্য সংগ্রহ করে তাঁরা হাতে তুলে দিতেন। একপর্যায়ে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়লেও বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতায় পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। পালিয়ে আসার সময় তিনি শত্রু ঘাঁটি থেকে একটি ধারালো দা নিয়ে আসেন, যেটি পরবর্তীতে তাঁর বীরত্বের প্রতীক হয়ে ওঠে।
সেই দা ব্যবহার করেই তিনি এক সাহসিকতা দেখিয়ে পাঁচ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করেন। ঘটনাটি তখন পুরো এলাকায় আলোড়ন তোলে এবং এখনও স্থানীয়দের মুখে মুখে ফেরে তাঁর গল্প। ঐতিহাসিক সেই দা বর্তমানে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে, যেখানে নামফলকে সখিনা বেগমের নাম উৎকীর্ণ রয়েছে।
এই অতুলনীয় সাহসিকতার জন্য সখিনা বেগমকে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর বীরত্ব ও অবদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ-ভিত্তিক বইপত্র এবং গবেষণাগুলোতেও বারবার উঠে এসেছে তাঁর নাম।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা চান্দালী মিয়া জানান, “সখিনা বেগম শুধু একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, তিনি ছিলেন প্রতীক এক বীরত্বের। পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি তাঁর অসীম সাহস এবং অবদানের কথা কোনোদিন ভুলে যাওয়ার নয়। তিনি আমাদের গর্ব।”
সখিনা বেগমের মৃত্যুতে কিশোরগঞ্জ তথা সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর জীবনের গল্প নতুন প্রজন্মের কাছে এক প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে, যা নারীর সাহসিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।#সখিনা_বেগম #নারী_মুক্তিযোদ্ধা #কিশোরগঞ্জ #মুক্তিযুদ্ধ #বীর_মুক্তিযোদ্ধা #বাংলাদেশের_গর্ব #মহান_স্বাধীনতা
Post a Comment