কিশোরগঞ্জ: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা ও নিষিদ্ধ করার দাবিতে কিশোরগঞ্জে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা যৌথভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
শুক্রবার (৯ মে) জুমার নামাজ শেষে শহরের ঐতিহাসিক শহীদি মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। 'জুলাই বিপ্লবী ছাত্র-জনতা' নামের একটি উদীয়মান সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে দেশের কয়েকটি প্রভাবশালী ছাত্র ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এতে এনসিপি, ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইশা ছাত্র আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে গৌরাঙ্গ বাজার মোড়ে এসে শেষ হয়। সেখানে আয়োজকরা এক সংক্ষিপ্ত অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। বক্তারা অভিযোগ করেন, গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে গণতন্ত্রকে হরণ করেছে, বিরোধী মতকে দমন করেছে এবং নাগরিক অধিকারকে ছিনিয়ে নিয়েছে।
বক্তৃতায় বক্তারা আওয়ামী লীগকে ‘একদলীয় ফ্যাসিবাদ কায়েমে লিপ্ত’ আখ্যায়িত করে অবিলম্বে এই দলকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। তারা বলেন, দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি, ভোটাধিকার ও মানবাধিকারের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন বলেন, “আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে কথা বলতে পারছি না। বিরোধী মতের কেউ টিকে থাকতে পারছে না। এটা একটি দুঃশাসনের নমুনা। আজ জনগণ জেগেছে, এই শাসনের অবসান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
এ কর্মসূচিতে গণঅধিকার পরিষদের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অভি চৌধুরী, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও বক্তব্য রাখেন। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রশ্নেই আপত্তি তুলে ধরে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে একযোগে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ‘সেইফ এক্সিট’ দেওয়ার পর থেকেই কিশোরগঞ্জে রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ উত্তপ্ত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ বাড়ছে এবং সরকারবিরোধী ঐক্য আরও সুসংগঠিত হচ্ছে বলে স্থানীয় বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একসঙ্গে বিভিন্ন মতাদর্শের সংগঠনের এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ আগামী জাতীয় রাজনীতিতে বৃহত্তর ঐক্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তারা বলছেন, এই ধরণের কর্মসূচি দেশের অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা আগামী দিনে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে।
সার্বিকভাবে, কিশোরগঞ্জের এ বিক্ষোভ কেবল একটি স্থানীয় কর্মসূচি নয় বরং একটি বড় রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
Post a Comment