কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার লুলিয়াকান্দি গ্রামে সরকারি কর্মচারী মো. আব্দুল বয়ানের মালিকানাধীন জমি দখল করে ঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে তিনজন স্থানীয় বাসিন্দার বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা হলেন—মৃত আলী নেওয়াজের পুত্র আ. রাশিদ ভুট্টু (৫০), মৃত হাজী হাফিজ উদ্দিনের ছেলে বাদল মিয়া এবং মো. আব্দুল করিম।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের পক্ষ থেকে গত ১৫ মে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি লিখিত পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। পিটিশনের বাদী হচ্ছেন আব্দুল বয়ানের ভাতিজা মো. সাইফুল মিয়া।
জমি কেনাবেচার ইতিহাস
জানা গেছে, ঢাকার মতিঝিল গণপূর্ত উপ-বিভাগ-২ এ অফিস সহায়ক (কম্পিউটার অপারেটর) হিসেবে কর্মরত মো. আব্দুল বয়ান ১৯৯৬ সালে মৃত আলী নেওয়াজের কাছ থেকে ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৪২ নম্বর দাগভুক্ত মোট ৫৯ শতাংশ জমি সাফ কবলা দলিলের মাধ্যমে ক্রয় করেন। পরে পারিবারিক প্রয়োজনে, বিশেষ করে ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাঠানোর খরচ যোগাতে তিনি জমির একটি অংশ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।
এই পর্যায়ে, স্থানীয় ব্যক্তি বাদল মিয়া জমিটি ১৮ লাখ টাকায় কিনতে সম্মত হন এবং প্রাথমিকভাবে ১৬ লাখ টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে ২ লাখ টাকা বাদল মিয়ার ভাগিনাকে ফেরত দেওয়া হয়।
বিরোধের সূত্রপাত
বাকি অর্থ পরিশোধ ও রেজিস্ট্রেশন না হওয়া সত্ত্বেও বাদল মিয়া জমির পূর্ণ মালিকানা দাবি করেন এবং নিজের দাবি অনুযায়ী জমি দখল করে ঘর নির্মাণ শুরু করেন। বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে একাধিকবার শালিস বৈঠকের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা নিষ্পত্তি হয়নি। এমনকি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতেও বিরোধ নিষ্পত্তি সম্ভব হয়নি।
এলাকাবাসীর মতামত
লুলিয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. ফেরদৌস মিয়া বলেন, “মো. বয়ান মিয়া ও বাদল মিয়ার মধ্যে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এক সময় ইউএনও শালিস করলেও বাদল মিয়া তা মানেননি। কিছুদিন আগে দেখি তারা জোরপূর্বক জমি দখল করে বাড়ি বানাতে শুরু করেছে।”
উভয় পক্ষের বক্তব্য
ভূক্তভোগী আব্দুল বয়ান জানান, “আমি ৫৯ শতাংশ জমি ১৯৯৬ সালে বৈধভাবে কিনেছিলাম। পারিবারিক চাহিদা মেটাতে ৩০ শতাংশ জমি বিক্রির প্রস্তাব দিই এবং বাদল মিয়াকে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার প্রস্তাবও করি। কিন্তু তিনি পুকুর ও বাড়ির জমি ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিই।”
অন্যদিকে বাদল মিয়া দাবি করেন, “আমি ৫৯ শতাংশ জমির জন্য ১৬ লাখ টাকা বায়না দিয়েছিলাম। দরবারে সিদ্ধান্ত হয়েছিল আমাকে ৩০ শতাংশ জমি ও ৯ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু টাকা না পেয়ে আমি পুরো জমি দখলে নিয়েছি।”
স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা
এই ঘটনায় ভূক্তভোগী পরিবারসহ এলাকাবাসী স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, সরকারি কর্মচারী হয়েও যদি কেউ নিজের সম্পত্তি রক্ষা করতে না পারেন, তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?#জমিবিরোধ #সরকারিকর্মচারী #হোসেনপুর #আইনিশরণ #কিশোরগঞ্জসংবাদ #বাংলাদেশ
Post a Comment