গ্রীষ্মের দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায়ও চলতি জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রচণ্ড তাপদাহে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। এ সময়টিতে গরম থেকে সাময়িক স্বস্তি পেতে কোমল পানীয়ের পাশাপাশি প্রাকৃতিক ঠান্ডা জোগানদার ফলের প্রতি ঝুঁকছে জনসাধারণ। এর মধ্যে অন্যতম হলো তালের শাঁস, যা বর্তমানে পাকুন্দিয়ার হাট-বাজারগুলোতে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
পাকুন্দিয়ার বিভিন্ন হাট-বাজার ও সড়কের মোড়ে মোড়ে এখন নিয়মিত দেখা মিলছে তালের শাঁস বিক্রেতার। তাল আকারে ছোট-বড় হওয়ায় দাম নির্ধারণ হচ্ছে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। মৌসুমি ফলের মধ্যে আম ও লিচুর মতো অন্যান্য ফলেও যেখানে ফরমালিনের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে, সেখানে তালের শাঁস সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত হওয়ায় ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন এটি কিনতে।
পৌর সদরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে বসে একাধিক বিক্রেতা তাল বিক্রি করছেন। প্রতিটি দোকানে বা স্টলে জড়ো হচ্ছে ক্রেতারা। কেউ খাচ্ছেন, কেউবা কিনে নিচ্ছেন বাড়ির জন্য। অনেকেই বলছেন, প্রচণ্ড গরমে তালের শাঁস খেয়ে স্বস্তি পাওয়া যায়।
স্থানীয় তাল ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া জানালেন, “গ্রামের তালগাছের মালিকদের কাছ থেকে শাঁস সংগ্রহ করে বিভিন্ন হাটে নিয়ে বিক্রি করি। আজ হাটের দিন হওয়ায় বেশি পরিমাণে শাঁস এনেছি। চাহিদা যেমন ভালো, তেমনি দামও সন্তোষজনক।” তিনি জানান, প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসে এই সময়টিতে তাল সংগ্রহ ও বিক্রি করে থাকেন। এ ব্যবসা গ্রীষ্ম মৌসুমে তাদের আয়ের অন্যতম উৎস।
অপর একজন বিক্রেতা ইসলাম উদ্দিন বলেন, “তাল গাছ থেকে তাল সংগ্রহ করাটা সহজ কাজ নয়। অনেক কষ্ট করে গাছে উঠে তাল কেটে আনতে হয়। এজন্য শ্রমিকদেরও ভালো পারিশ্রমিক দিতে হয়। একটি গাছে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০টি তাল পাওয়া যায়। মৌসুমের শুরু থেকেই আমরা বিক্রি শুরু করি এবং এটি চলতে থাকে পুরো মাসজুড়ে।”
তালের শাঁস কেনার অভিজ্ঞতা জানিয়ে ইসমাইল হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, “এই ফলটা খুবই মজার। গরমে এক ধরনের ঠান্ডা অনুভূতি দেয়। তালের শাঁস শুধু সুস্বাদুই নয়, স্বাস্থ্যকরও। এই মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে পাওয়া যায় না বলে যতটা সম্ভব কিনে রাখি।”
তালের শাঁসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কেও বক্তব্য দিয়েছেন পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর এ আলম খান। তিনি বলেন, “তালের শাঁসের মধ্যে উচ্চমাত্রার জলীয় অংশ থাকে, যা শরীরকে পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করে। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কাঁচা তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করতেও সহায়তা করে।”
এই মৌসুমে পাকুন্দিয়ার তালের শাঁস যেন হয়ে উঠেছে প্রাকৃতিক পানীয়ের এক অনন্য বিকল্প। ভেজালমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর এই ফল গ্রীষ্মকালীন খাবারের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বেশ জোরালোভাবেই। চাহিদা ও সচেতনতা—দুটোর সমন্বয়েই তাল ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন ভালো লাভ এবং ভোক্তারাও পাচ্ছেন প্রাকৃতিক স্বস্তির অনন্য এক উৎস।
#তালেরশাঁস #পাকুন্দিয়া #গ্রীষ্মেরফল #স্বাস্থ্যকরখাবার #বাংলাদেশীনিউজ #জ্যৈষ্ঠমাস #তালব্যবসা #ভেজালমুক্তফল #কিশোরগঞ্জ #দেশেরসংবাদ
Post a Comment