১৭ বছর পর কলেজছাত্র মোহাম্মদ আলী হত্যা মামলার রায়: তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে চলা বিচারিক কার্যক্রমের পর অবশেষে কিশোরগঞ্জে কলেজছাত্র মোহাম্মদ আলী হত্যার ঘটনায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২০ মে ২০২৫) কিশোরগঞ্জের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফাতেমা জাহান স্বর্ণা এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে দণ্ডিতরা হলেন—ভৈরবপুর উত্তরপাড়া এলাকার শাকিল উদ্দিনের ছেলে মো. সুমন মিয়া (৩৯), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দৌলতদিয়া গ্রামের মো. কাইয়ুম সরকারের স্ত্রী সেলিনা বেগম (৪১), এবং আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের কন্যা শোভা প্রকাশ (৩৭)। রায় ঘোষণার সময় শুধুমাত্র সেলিনা বেগম আদালতে উপস্থিত ছিলেন; বাকি দুই আসামি পলাতক রয়েছেন।

প্রত্যেক দণ্ডপ্রাপ্তকে মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) শফিউল জামান ভূঁইয়া ও পিপি অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন এই রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঘটনার পটভূমি:
মোহাম্মদ আলী ছিলেন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার তারাকান্দি মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং ভৈরব হাজী আসমত কলেজের বিএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। তিনি কলেজ হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করতেন।

২০০৮ সালের ৬ জানুয়ারি রাতে, কলেজ গেট দিয়ে প্রবেশ করার সময় মোহাম্মদ আলী ও তার বন্ধু মোরাদ হামলার শিকার হন। অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা তাদের উপর এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয় ছাত্ররা দ্রুত আহতদের উদ্ধার করে ভৈরব মাতৃকা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোহাম্মদ আলীকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত মোরাদকে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ঘটনার পরদিন, নিহতের বাবা মো. সামছুদ্দিন মিয়া ভৈরব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তভার পেয়ে তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আ. আজিজ মামলার তদন্ত শেষে ওই বছরের ৩০ মে চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

বিচারিক প্রক্রিয়া:
দীর্ঘ বিচারিক শুনানি শেষে আদালত তিনজন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে মর্মে রায় ঘোষণা করেন। এ মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান দায়িত্ব পালন করেন।

এই রায়ে নিহতের পরিবার এবং স্থানীয়রা কিছুটা স্বস্তি পেলেও দীর্ঘ সময় ধরে বিচার বিলম্বের কারণে হতাশাও প্রকাশ করেছেন। নিহত মোহাম্মদ আলীর পরিবার এই রায়কে ন্যায়ের বিজয় হিসেবে দেখলেও দ্রুত দণ্ড কার্যকরের দাবিও জানান।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া:
মামলার রায় ঘোষণার পর স্থানীয় এলাকায় আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। দীর্ঘদিন পর এমন একটি রায়ের মাধ্যমে মানুষ ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করছেন। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিচার প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও উদ্যোগী হওয়া জরুরি।

#কলেজছাত্রহত্যা #মৃত্যুদণ্ড #কিশোরগঞ্জ #বাংলাদেশবিচারব্যবস্থা #আইনওবিচার #হত্যামামলাররায়

Post a Comment

Previous Post Next Post