চরমোনাই পীরের দলে যোগ দেওয়া সাবেক এমপিকে বহিষ্কার করল বিএনপি

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের এক সপ্তাহের মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত জানায় বিএনপি।

মঙ্গলবার, ১৩ মে, দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব ধরনের সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”

উল্লেখ্য, ৬ মে (মঙ্গলবার) পটুয়াখালী-৪ আসনের সাবেক এমপি মো. মোস্তাফিজুর রহমান চরমোনাই দরবারে উপস্থিত হয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীমের হাতে আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটিতে যোগ দেন। যোগদানের সময় তার সঙ্গে ছিলেন শতাধিক স্থানীয় নেতা-কর্মী।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসন থেকে স্বল্প সময়ের জন্য সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘদিন কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্বে ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় রাজনীতিতে কিছুটা কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও, বিএনপির বর্তমান উপজেলা কমিটিতে তিনি সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসলামী মূল্যবোধ ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়ার কারণে অধ্যাপক মোস্তাফিজ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পতাকাতলে যোগ দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে ‘হাতপাখা’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

রাজনৈতিক অঙ্গনে এই দলবদল বেশ আলোচিত ঘটনা হয়ে উঠেছে। একদিকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার, অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয় হওয়ার মধ্য দিয়ে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান নিজ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন। তবে তার এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় রাজনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অধ্যাপক মোস্তাফিজের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা এবং দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা তাকে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। যদিও তার দলবদলের এই সিদ্ধান্তে বিএনপির ঘরোয়াভাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাংগঠনিক ভিত্তি শক্ত করছে এবং সামনের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের অন্তর্ভুক্তি দলটির অবস্থান আরও দৃঢ় করবে বলে দলীয় সূত্রে ধারণা করা হচ্ছে।

এমন অবস্থায়, আগামী নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনে কিছুটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে দলটি। একসময় যারা বিএনপির শক্ত ভিত্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিকল্প রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম খুঁজে নেওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, অধ্যাপক মোস্তাফিজের এই দলবদল স্থানীয় রাজনীতির জন্য যেমন তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি জাতীয় রাজনীতির গতিপথেও প্রভাব ফেলতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post