ইটনায় অটোরিকশা চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যুবকের মৃত্যু

কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলায় অটোরিকশা চার্জ দেওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তোফায়েল মিয়া (২০) নামে এক যুবক মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। সোমবার (২৬ মে) সকালে মৃগা ইউনিয়নের প্রজারকান্দা গ্রামে এই দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। নিহত তোফায়েল ওই গ্রামের নিয়াজ উদ্দিনের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো আজ সকালে নিজের চালানো অটোরিকশাটি চার্জ দিতে যান তোফায়েল। বাড়ির ঘরের মধ্যে রাখা চার্জিং পয়েন্টে সংযোগ দেওয়ার পর অটোরিকশার শরীরে হাত দিলে সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। মুহূর্তেই তিনি অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা দ্রুত ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পর পুরো গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। সবাই যেন হতবাক হয়ে পড়েছেন এক তরতাজা যুবকের এমন করুণ মৃত্যুতে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তোফায়েল অত্যন্ত ভদ্র, পরিশ্রমী ও পরিবারের দায়িত্ববান সদস্য ছিলেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় অল্প বয়সেই জীবিকার সন্ধানে নেমেছিলেন তিনি। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন করতেন, তা দিয়েই চলতো তার পরিবার।

প্রতিবেশী এক ব্যক্তি জানান, “তোফায়েল খুবই ভালো মনের ছেলে ছিল। পরিবারের জন্য সে দিনরাত পরিশ্রম করতো। তার অকাল মৃত্যু আমাদের সবাইকে শোকাহত করেছে।” আরেকজন বলেন, “এই বয়সে এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া খুবই কঠিন। তোফায়েল ছিল তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য। তার মৃত্যু শুধু তার পরিবার নয়, আমাদের এলাকাও একজন সৎ ও সংগ্রামী ছেলেকে হারাল।”

জানা গেছে, তোফায়েলের পরিবারের আর্থিক অবস্থা অনেকটাই সংকটাপন্ন। তার বাবা নিয়াজ উদ্দিন কৃষিকাজ করলেও বয়সের কারণে এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারেন না। এ অবস্থায় তোফায়েল রিকশা চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছিলেন। সেই ছেলেটির এভাবে হঠাৎ বিদায় যেন পরিবারের সব আশা-ভরসাকে নিঃশেষ করে দিয়েছে।

এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সহায়তার ঘোষণা পাওয়া যায়নি। তবে এলাকাবাসী চান, তোফায়েলের পরিবারের পাশে দাঁড়াক সরকার কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা, যেন অন্তত পরিবারটি এই শোকের সময় কিছুটা সান্ত্বনা পায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটোরিকশা কিংবা অন্যান্য ইলেকট্রিক যানবাহন চার্জ দেওয়ার সময় যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঘরের ভেতর চার্জ দেওয়ার সময় বিদ্যুতের তার ও সংযোগগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করা, মাটি সংযোগ নিশ্চিত করা এবং চার্জিং সময় রিকশার গায়ে হাত না দেওয়া—এসব বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যুর মতো ঘটনা বাংলাদেশে নিয়মিতই ঘটছে, যা প্রতিরোধযোগ্য। বিদ্যুৎ ব্যবহারে অসতর্কতা, অপ্রশিক্ষিত হাতে সংযোগ দেওয়ার কাজ, এবং মানহীন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে এমন প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

তোফায়েলের মৃত্যু আমাদের আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেয়, জীবনের নিরাপত্তার জন্য সচেতনতা ও সঠিক পদক্ষেপ কতটা জরুরি। একইসঙ্গে আমাদের কর্তৃপক্ষ ও সমাজকে এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায়।
#তোফায়েলমিয়া #কিশোরগঞ্জনিউজ #ইটনা #বিদ্যুৎস্পৃষ্টমৃত্যু #অটোরিকশা #বাংলাদেশনিউজ #দুঃখজনকঘটনা #সংবেদনশীল

Post a Comment

Previous Post Next Post