ভৈরবে বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র ও কৃষক ছাউনির দাবি কৃষকদের
জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব ॥
বোরো ধান কাটার মৌসুম শুরু হলেও আনন্দ আর উল্লাসের পরিবর্তে আতঙ্ক বিরাজ করছে কিশোরগঞ্জের ভৈরব জোয়ানশাহী হাওরের কৃষকদের মাঝে। গত কয়েক বছরে ওই অঞ্চলে নারী-পুরুষ ও ১ শিক্ষার্থী সহ বজ্রপাতে মারা গেছেন ৬ জন। আহতও হয়েছেন অনেকেই। তাই হাওরের ফসল কর্তনের সময় ঝড় তুফান আর শিলা বৃষ্টি থেকে নিরাপদ থাকতে বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র স্থাপন ও কৃষক ছাউনির দাবি জানিয়েছেন ওই হাওর অঞ্চলের কৃষকরা। কৃষকদের দাবি পূরণের আশা দিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন।
সরেজমিনে জানা যায়, বৈশাখের তপ্ত রোদ আর শীলা বৃষ্টি উপেক্ষা করেই উৎসব মুখর পরিবেশে জোয়ানশাহী হাওরে কৃষকরা মেতে উঠেছে তাদের স্বপ্নের বোরো ধান কাটায়। প্রায় ৮ হাজার একর জমি নিয়ে বিস্তৃত উপজেলার জোয়ানশাহী হাওর। এই হাওরে নেই কোনো গাছপালা, না আছে কোনো ঘরবাড়ি। তার মধ্যে রয়েছে ঝড় তুফান আর শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা। এসব ঝুঁকি নিয়েই জমি থেকে ধান কেটে বাড়ি আনছেন কৃষকরা। আবার অনেকেই ধান কাটছেন জমিতে। ধানের প্রক্রিয়া শেষ করতে হাওরের মাঝে মাঠ বানিয়ে সেখানেই চলছে ধান মাড়াই, সেদ্ধ আর শুকানোর কাজ। ধান সেদ্ধ করতে কষিাণীরা নিপুণ হাতে বানিয়েছেন মাটির তৈরি চুলা। আর সেই চুলোই কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন নিয়ে ধান সেদ্ধ করছেন কিষাণীরা। কেউ চুলোয় আগুনের তাপ দিচ্ছেন আবার কেউবা চুলাতে বসানো হাঁড়িতে দিচ্ছেন শুকনো ধান। বৈশাখের তপ্ত রোদে একটু বিশ্রাম নিতে নিজ হাতে তৈরি করেছেন পলিথিন আর বাঁেশর কঞ্চি দিয়ে ক্ষণস্থায়ী ছোট্ট একটি ছাউনি, যা একটু বাতাসেই উড়ে যাবে। ক্লান্ত শরীরে সেই ছায়াতেই একটু বিশ্রাম নিতে দেখা যায় কৃষকদের। এক সময় উৎসব মুখর পরিবেশে আর মনের আনন্দে যে ধান কাটতো কৃষকরা এখন সেই ধান কাটতে হচ্ছে বজ্রপাত আর শিলা বৃষ্টির আশঙ্কা মাথায় নিয়ে। হাওরের মাঝে কৃষক ছাউনি বা বিশ্রামাগার তৈরি করা হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে নিরাপদে ধান কেটে গোলায় তুলার আশা হাওর অঞ্চলের কৃষকদের। বিশাল হাওরে কৃষকদের জন্য ছাউনি আর বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র স্থাপন করা হলে কৃষকরা অনেক উপকৃত হবে এমনটাই মনে করছেন জোয়ানশাহী হাওর এলাকার বাসিন্দারা।
কৃষক আমির হোসেন, রহমত আলীসহ আরো কয়েকজন বলেন, কয়েক বছর আগেও বৈশাখের আনন্দে নেচে গেয়ে ধান কেটে ঘরে তুলেছি। গত দু তিন বছর যাবৎ আমাদের সেই আনন্দ আর নেই। আকাশ কালো হতেই শুরু হয় ঝড় আর শিলা বৃষ্টি। সেই আতঙ্ক নিয়ে আমরা এখন ধান কাটি। এত বড় হাওরে যখন বৈরি আবহাওয়া শুরু হয় তখন আশ্রয় নেয়ার মতো এখানে কোনো জায়গা নেই। তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, সরকার যেন আমাদের মতো কৃষকদের জীবনের কথা বিবেচনা করে হাওরের মাঝামাঝি দু একটা ছাউনি ঘর (আশ্রয়স্থল) আর দুু চারটা বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র বা দন্ড স্থাপন করে দেন।
শ্রমিক ফরিদুল বলেন, গত বছর হাওরে ধান কাটার সময় হঠাৎ বজ্রপাত শুরু হলে আমাদের সাথে থাকা একজন মারা গেছেন। সেই থেকে আমাদের মনের মাঝে অনেক ভয় বিরাজ করতে থাকে।
শ্রমিক সাদেক আর সাজ্জাদ বলেন, এখন আমরা নিরাপদে কাজ করতে পারিনা। আগে ধান কাটতে এসে সহকর্মীদের নিয়ে কতইনা গান গেয়ে ধান কাটতাম। এখন আর সেই আনন্দ নেই। সার্বক্ষণিক মনের মাঝে ভয় কাজ করে কখন হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড় বৃষ্টিতে দৌড়াতে গিয়েও আরো ভয় লাগে এখনি বুঝি একটা বজ্রপাত হয়ে যাবে।হারুন অর রশিদ, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান, শ্রীনগর ইউনিয়ন॥
বিশাল এ হাওরে রয়েছে হাজার একর জমি যেখানে হাজারো কৃষক তাদের ফসল ফলায়। হাওরের মাঝ থেকে কৃষকদের বাড়ি কোথাও থেকে দেড়, আবার কোথাও থেকে ২ কিলোমিটার দূরত্বে। এ রকম একটি অবস্থান থেকে তাদের কাজ করতে হয়। ঐ সময়টাতে হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে তখন তাদের আর কোথাও আশ্রয় নেওয়ার মতো জায়গা নেই। কৃষকদের দাবির সাথে আমিও একমত পোষণ করে বলছি হাওরের মাঝ ৩টি স্থান রয়েছে লোকালয় থেকে যার দূরত্ব বেশি। কৃষকদের কথা বিবেচনা করে সেই স্থানগুলোতে সরকার যদি দু একটি আশ্রয় কেন্দ্র আর কয়েকটা বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র স্থাপন করে দেয়, তাহলে কৃষকরা নিরাপদে তাদের চাষাবাদ করতে পারবে।
শবনম শারমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ভৈরব উপজেলা॥
ভৈরব উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে ৮ হাজার একর জমি নিয়ে বিস্তৃত জোয়ানশাহী হাওর। এই হাওর এলাকার কৃষকরা মূলত বোরো ধানই চাষ করে থাকে। কৃষকদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি যে হাওরে কাজ করার সময় ঝড় তুফান আর শিলা বৃষ্টির সময় তারা আতঙ্কে থাকে। দুর্যোগ আবহাওয়া তাদের নিরাপত্বার জন্য দরকার একটি নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র পাশাপাশি আরো দরকার বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র স্থাপন করা। তাহলে কৃষকরাও নিরাপদে ধান কাটতে পারবে। তবে এ মৌসুমে হাওরে এখন পানি উঠে যাবে। তাই পরবর্তী সময়ে তাদের এই প্রয়োজনীয় বিষয়টি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো।
Post a Comment