২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও মুখ খুলেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ওই সময় ইসলামবিরোধী তৎপরতা ও তথাকথিত শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলা হয়েছিল। একইসঙ্গে সংগঠনটি শাহবাগ আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী এক বিবৃতিতে বলেন, “২০১৩ সালে ভারতীয় প্রভাব ও ইসলামবিরোধী গোষ্ঠীর সমর্থনে শাহবাগে একটি ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থান ঘটেছিল। এই শক্তি ইসলামী মূল্যবোধ ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হেনেছিল। হেফাজতে ইসলাম সেই সময় ধর্মপ্রাণ জনতার পক্ষ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে ৫ মে রাতের আঁধারে শাপলা চত্বরে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, যা জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।”
তিনি আরও বলেন, “রাতভর তাহাজ্জুদে মগ্ন নিরীহ তৌহিদি জনতার ওপর যে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন চালানো হয়েছিল, তাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিল একদল উগ্র সেক্যুলার ও তথাকথিত প্রগতিশীল গোষ্ঠী। যারা নিজেদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষপাতী দাবি করলেও, ধর্মীয় অধিকার ও ন্যায়বিচারের বিষয়ে বরাবরই চুপ থেকেছে।”
হেফাজতের দপ্তর সম্পাদক মাওলানা আফসার মাহমুদ এক বিবৃতিতে বলেন, “শাপলা চত্বরের চেতনাই ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। সেই অভ্যুত্থানে শতাধিক মাদরাসা ছাত্র-শিক্ষক শহীদ হয়েছেন। দেশের সাধারণ ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রেখেছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “একটি বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা সম্প্রতি আলেম সমাজকে 'মৌলবাদী' বলে মন্তব্য করেছেন, যা ভারতীয় ও আওয়ামী বয়ানের পুনরাবৃত্তি ছাড়া কিছু নয়। এ ধরনের মন্তব্য ধর্মপ্রাণ জনগণের অনুভূতিতে আঘাত করে এবং জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করে।”
বিবৃতিতে হেফাজতের নেতারা বলেন, “ইসলামবিরোধী শক্তি বরাবরই ধর্মীয় অনুভূতিকে অবমূল্যায়ন করে, সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে। এই চক্রান্ত রুখতে হলে, বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে সতর্ক থাকতে হবে।”
সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, “যারা শাপলা চত্বরের গণহত্যার সমর্থক, যারা ধর্মীয় অধিকারকে পদদলিত করেছে—তাদের বিচার নিশ্চিত না করা পর্যন্ত প্রকৃত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এদের বিচার না হলে ইতিহাস বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে।”
বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলাম বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, “সচিবালয়সহ প্রশাসনিক অস্থিরতা নিরসনে সরকারকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে এবং দেশ আবার একটি স্থিতিশীল পরিবেশে ফিরতে পারে।”
এছাড়াও সংগঠনটি আগামী জুলাই মাসকে ফ্যাসিবাদ ও ইসলামবিরোধী চক্রান্ত প্রতিরোধের মাস হিসেবে উল্লেখ করে ছাত্র-জনতাকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।#হেফাজতে_ইসলাম #শাহবাগ_আন্দোলন #শাপলা_চত্বর #ইসলামবিরোধী_চক্রান্ত #বাংলাদেশ_রাজনীতি #ছাত্র_আন্দোলন #ন্যায়বিচার #ধর্মীয়_অধিকার
Post a Comment