মাগুরা জেলার আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। মাত্র ২ মাস ১১ দিনের মাথায় দ্রুত বিচার কার্যক্রম শেষে এই রায় ঘোষণা করা হয়। মামলার অপর তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
শনিবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে মাগুরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এ রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্র ও অভিযুক্ত পক্ষের টানা শুনানি এবং সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এই রায় প্রদান করেন, যা এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত হিটু শেখ শিশু আছিয়ার বড় বোনের শ্বশুর। বাকি তিনজন খালাসপ্রাপ্ত আসামি হলেন—আছিয়ার দুলাভাই সজীব শেখ, তার ভাই রাতুল শেখ ও তাদের মা জাহেদা বেগম।
ঘটনাপ্রবাহ: ভয়ঙ্কর সেই দিন
গত ৬ মার্চ, মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ভয়াবহ এ ঘটনার শিকার হয় মাত্র আট বছরের শিশু আছিয়া। তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে, এরপর ফরিদপুর মেডিকেলে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবশেষে ১৩ মার্চ ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।
দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া: নজির স্থাপন
আলোচিত এই মামলায় পুলিশ গত ১৩ এপ্রিল চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠন করে শুরু হয় বিচারিক কার্যক্রম। মাত্র ১২ কার্যদিবসে সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি সম্পন্ন হয়, যেখানে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ২৯ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন। আদালত ছুটির দিন বাদ দিয়ে টানা শুনানি চালিয়ে এ মামলার কার্যক্রম শেষ করেন।
রায়ের প্রভাব ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
রায় ঘোষণার পরপরই আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন নিহত শিশুর স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “ন্যায়বিচার হয়েছে, এ রায় অন্য অপরাধীদের জন্য বার্তা হয়ে থাকবে।”
তবে খালাসপ্রাপ্তদের পরিবার জানিয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে নির্দোষ ছিল, এবং আদালতের রায়ে সত্য প্রকাশ পেয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের বক্তব্য
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলেন, “আমরা সন্তুষ্ট। আদালত দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে নির্ভুল রায় দিয়েছেন। শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে এটি একটি দৃষ্টান্তমূলক রায়।”
অপরদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী জানান, “তিনজন খালাস পাওয়ায় আমরা খুশি। তবে হিটু শেখের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।”
Post a Comment