‘বিদায় বাংলাদেশ’ লিখে গা-ঢাকা দেওয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রাজীব হেলুকে অবশেষে গ্রেপ্তার করলো অষ্টগ্রাম থানা পুলিশ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে “বিদায় বাংলাদেশ” লিখে দেশত্যাগের ইঙ্গিত দিয়ে আলোচনায় আসা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রাজীব আহমেদ হেলুকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার পুলিশ সোমবার (১২ মে) রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের মধুরহাটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।

রাজীব আহমেদ হেলু গত ৩১ জানুয়ারি নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে তিনি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। সেই ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, “সময়ের কারণে সবাইকে বলতে পারি নাই, বিদায় বাংলাদেশ।” পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। অনেকেই ধারণা করেন, তিনি হয়তো দেশে কোনো বড় সমস্যা এড়িয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। অথচ প্রকৃতপক্ষে তিনি তখনও দেশেই ছিলেন এবং নিজ বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।

এ ঘটনার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার খোঁজে তৎপর হয়। জানা যায়, রাজীব আহমেদ হেলু কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বণিক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার বিরুদ্ধে থানায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডসহ অন্তত তিনটি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় সংঘটিত সহিংস কর্মকাণ্ডের অভিযোগও অন্তর্ভুক্ত।

পুলিশ জানায়, ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি নজরদারির বাইরে চলে যান এবং কোনো ধরনের রাজনৈতিক বা সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করে আত্মগোপনে থাকেন। তাকে ধরতে পুলিশের একাধিক অভিযান চালানো হলেও দীর্ঘদিন সফলতা মেলেনি। অবশেষে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাতের অভিযানে তাকে আটক করা সম্ভব হয়।

অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন সাংবাদিকদের জানান, “রাজীব আহমেদ হেলু আমাদের কাছে বহুদিন ধরেই পলাতক আসামি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্ত চলমান রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।”

রাজীবের গ্রেপ্তারের পর এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ এটিকে আইনের শাসনের জয় হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ বলেও মনে করছেন। তবে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণের বিষয়েও ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post