রাজনীতির মাঠে নেতাদের উদ্দেশ্যে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা কখনো কখনো রূপ নেয় ব্যতিক্রমী উদ্যোগে। এমনই এক ব্যতিক্রমী ভালবাসার নজির গড়েছেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার কৃষক সোহাগ মৃধা। তাঁর দীর্ঘ ছয় বছর ধরে লালন-পালন করা একটি ৩৫ মণ ওজনের ষাঁড় তিনি ঈদুল আজহা উপলক্ষে উপহার দিতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। ষাঁড়টির নাম রেখেছেন ‘কালো মানিক’।
ষাঁড়টি শুধু একটি পশু নয়, বরং পরিবারেরই এক সদস্যে পরিণত হয়েছে। সোহাগের পরিবার ষাঁড়টিকে সন্তানসম ভালোবাসা দিয়ে লালন-পালন করেছে। কুচকুচে কালো রঙের এই ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টি দেখতে এখন প্রতিদিনই ভিড় করছে দূরদূরান্তের উৎসুক মানুষ।
সোহাগ জানান, গত বছর ঈদে এক ক্রেতা ষাঁড়টির দাম হেঁকেছিলেন ১০ লাখ টাকা। কিন্তু অর্থের মোহে নয়, আবেগের জায়গা থেকে তিনি সেটি বিক্রি করেননি। বরং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার আদরের ষাঁড়টি প্রিয় রাজনৈতিক নেত্রী খালেদা জিয়াকে উৎসর্গ করবেন। তিনি বলেন, “আমি বিএনপিকে ভালোবাসি। নেত্রীকে কিছু দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলেও কালো মানিককে উপহার দিয়ে ভালোবাসা জানাতে চাই।”
খালেদা জিয়া আদৌ উপহারটি গ্রহণ করবেন কি না, তা নিশ্চিত নন সোহাগ। তবে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ষাঁড়টি ঢাকায় পৌঁছে দিতে ভাড়া করা হয়েছে দুটি মিনি ট্রাক, খরচ পড়েছে ৬০ হাজার টাকা। যাত্রার জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ গেঞ্জি, ব্যানার এবং দলের প্রতীকসম্বলিত ব্যাবস্থা।
সোহাগ মৃধার বাড়ি মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামে। তিনি ইউনিয়ন পর্যায়ের বিএনপির কর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। তাঁর মা হাজেরা বেগম জানান, “ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই বিএনপির কর্মসূচিতে যায়। অনেক আগেই বলছিল কালো মানিকটা খালেদা জিয়াকে উপহার দেবে।”
২০১৮ সালের শেষ দিকে স্থানীয় চৈতা বাজার থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি গাভি কিনেছিলেন সোহাগ। সেই গাভি এক সপ্তাহের মধ্যেই একটি বাছুর প্রসব করে। পরে গাভিটি বিক্রি করে সেই বাছুরকেই পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় ছয় বছর ধরে যত্নে লালন-পালন করেন। খড়, ঘাস, ভুসি আর খৈল খাইয়ে আজকের বিশালদেহী কালো মানিকে রূপ দিয়েছেন তিনি। এখন ষাঁড়টির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ফুট, উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি এবং ওজন প্রায় ১,৪০০ কেজি।
আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, “সোহাগ আমাদের দলের একজন নিবেদিত কর্মী। ষাঁড়টি উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্তে সে অনেকটা আবেগপ্রবণ হলেও তার আন্তরিকতাকে আমরা সম্মান করি।”
এদিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাবুদ্দিন জানান, “এই উপহারের বিষয়ে সোহাগ তাঁর সঙ্গে সরাসরি কোনো আলোচনা করেননি। তবে সংবাদমাধ্যমের খবরে বিষয়টি জানতে পেরেছেন তিনি।”
পারিবারিক আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয় সোহাগের। বাবা নেই, সামান্য কিছু জমিতে কৃষিকাজ করেই সংসার চালান তিনি। মা, স্ত্রী ও দুটি সন্তানকে নিয়েই চলে তাঁর সংগ্রামী জীবন। তবুও প্রিয় নেত্রীর প্রতি ভালোবাসার জায়গা থেকে এত বড় এক ত্যাগ স্বীকার করতে যাচ্ছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এক কৃষক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি গরু উপহার দেন। সেই ঘটনার প্রেরণাতেই সোহাগ মনের মধ্যে বাসা বাঁধা এই ইচ্ছা বাস্তবে রূপ দিতে চলেছেন।
এখন শুধু অপেক্ষা, কালো মানিক ঢাকায় পৌঁছাবে কিনা, আর খালেদা জিয়া আদৌ কৃষকের এই হৃদয় নিংড়ানো উপহার গ্রহণ করবেন কি না।#খালেদাজিয়া #বিএনপি #কালোমানিক #কৃষকেরউপহার #পটুয়াখালী #ঈদুলআজহা #বাংলাদেশরাজনীতি #mirzaganj #BNPnews #বাংলাদেশনিউজ
Post a Comment