পাকুন্দিয়ায় বজ্রপাতে স্কুলগামী তিন শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু, কিশোরগঞ্জজুড়ে শোকের ছায়া

প্রতিবেদন:রাইয়্যান 
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরটেকি ইউনিয়নে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছে তিন কিশোরী শিক্ষার্থী। সোমবার দুপুরে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে স্কুলে যাওয়ার সময় আকস্মিক বজ্রপাতের কবলে পড়ে তারা। ঘটনাটি ঘটে ইউনিয়নের ভিপি আবদুল হাকিমের বাড়ির সামনের সড়কে। নিহত তিনজনই চরটেকি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।

নিহতদের পরিচয় জানা গেছে—মোছা. ইরিনা (১৬), তার পিতা মো. জালাল উদ্দিন; প্রিয়া (১৬), পিতা মো. বাদল মিয়া; এবং বর্ষা (১৬), পিতা বোরহান উদ্দিন। তিনজনই একই এলাকার, অর্থাৎ চরটেকি ইউনিয়নের ফকিরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরের দিকে কালো মেঘে ঢাকা পড়ে আকাশ। ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনায় শিক্ষার্থীরা দ্রুত স্কুলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। ঠিক সেই সময় হঠাৎ করে প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাত ঘটে, যা সরাসরি তাদের ওপর আঘাত হানে। ঘটনাস্থলেই ইরিনা ও প্রিয়া প্রাণ হারান। গুরুতর আহত বর্ষাকে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু কিছুক্ষণ পর তিনিও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, "এই তো কিছুক্ষণ আগেও তারা হাসিখুশি মুখে স্কুলে যাচ্ছিল, কেউ বলছিল আজ আকাশ ভালো না—চল দ্রুত যাই। কে জানত, এটাই হবে তাদের জীবনের শেষ যাত্রা!"

এই ঘটনায় পুরো গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের বাড়িতে চলছে আহাজারি, স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। স্কুলের শিক্ষক, সহপাঠী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং গভীর শোক প্রকাশ করেন।

জলবায়ু সংকট এবং বজ্রপাতের ঝুঁকি

বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলসহ কিশোরগঞ্জ জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতের ঘটনা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। শুধুমাত্র গত এক মাসেই জেলায় বজ্রপাতজনিত কারণে অন্তত ১০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত কালবৈশাখী ঝড় এবং বজ্রপাতের প্রবণতা বেড়ে যায়।

আবহাওয়াবিদদের মতে, বজ্রঝড়ের সময় বাতাসে বিদ্যুৎ প্রবাহ বেড়ে যায় এবং ঘন কালো মেঘ হঠাৎ করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বজ্রপাত হতে পারে। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, ঝড় শুরু হলে খোলা মাঠ বা উঁচু জায়গা এড়িয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে এবং মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে।

প্রতিকার ও জনসচেতনতায় জোর দাবি

স্থানীয় জনগণ ও সচেতন মহলের দাবি, কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকাগুলোতে বজ্রপাত প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় স্কুল-কলেজে প্রশিক্ষণ, আগাম পূর্বাভাস প্রচার এবং বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র স্থাপন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে প্রাথমিক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে এলাকাবাসীর দাবি, শুধু সহানুভূতি নয়—দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

Post a Comment

Previous Post Next Post