কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার চৌগাংগা ইউনিয়নে মাছ ধরা নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরে চাচার সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাতে মোকারিম (১৮) নামের এক তরুণের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইউনিয়নের ভিরার ভিটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মোকারিম ভিরার ভিটা গ্রামের ফারুক মিয়ার ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ইটনার বিস্তৃত হাওরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিকভাবে উত্তেজনা চলছিল। ঘটনার দিন রাতে চাচা বাবুল মিয়া ও ভাতিজা মোকারিমের মধ্যে মাছ ধরার সীমানা ও ভাগ নিয়ে তর্ক শুরু হয়। শুরুতে বিষয়টি কথাকাটাকাটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও একপর্যায়ে তা রূপ নেয় সহিংসতায়।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয় মোকারিমের বুকে। আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে মোকারিমের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার পর গ্রামে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, ছুরিকাঘাতের জন্য মূলত বাবুল মিয়াই দায়ী। তবে এখন পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি।
ইটনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাফর ইকবাল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে চাচা ও ভাতিজার মধ্যে বিরোধ থেকে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। তবে এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না কে ছুরিকাঘাত করেছে। তদন্ত চলছে, প্রমাণ পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের পর গ্রামে বাড়তি উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রামবাসীরা দ্রুত অপরাধীর গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা দায়ের হয়নি বলে জানা গেছে। নিহত মোকারিমের পরিবার বর্তমানে গভীর শোক ও আতঙ্কে রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়েছেন এবং সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।
এই হত্যাকাণ্ড আবারও প্রমাণ করে, গ্রামীণ সমাজে পারিবারিক বিরোধ কতোটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে হাওর এলাকার মতো প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চলে সম্পদ ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রায়ই গুরুতর অপরাধের রূপ নেয়। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃত্বের আরও কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।
Post a Comment