ভৈরবে পাবলিকিয়ান্স ফোরামের আয়োজনে নবীনবরণ ও কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব প্রতিনিধি ॥
দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ভৈরবের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত সংগঠন পাবলিকিয়ান্স ফোরাম অব ভৈরব-এর উদ্যোগে নবীনবরণ ও কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা, দিকনির্দেশনা এবং পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় করার লক্ষ্যে এ আয়োজন করা হয়।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে ভৈরব উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ভৈরবের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সংগঠনের কার্যক্রমে যুক্ত নবীন শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পাবলিকিয়ান্স ফোরাম অব ভৈরব-এর সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজিব মিয়া। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. হাবিবুর রহমান, প্রভাষক আবদুল মতিন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল ইসলাম, এহসানুল হক এবং প্রভাষক মো. রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভৈরবের কৃতী ও গুণী সন্তানদের স্মরণ করা হয়। এ সময় ভৈরবের গর্ব সিরাজুল হক, রেবতী বর্মন, কমান্ডার (অব.) আবদুর রউফ, শিক্ষাবিদ মিন্নাত আলী ও হাজী আসমত আলীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। তাদের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এবছর ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া ভৈরবের কৃতি শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে ক্রেস্ট প্রদান করে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধিত শিক্ষার্থীরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, এমন আয়োজন তাদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হতে এবং ভবিষ্যতে দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া একটি বড় অর্জন হলেও এখানেই শেষ নয়। একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই মনোযোগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। পড়ালেখায় অবহেলা করলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক, প্রশাসক ও নীতিনির্ধারক হবে। তারা যদি সঠিক শিক্ষা ও নৈতিকতার আলোকে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে, তাহলে দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।”
স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, “৫৪ বছর আগে জীবন বাজি রেখে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারিনি। বিগত দিনের শাসকগোষ্ঠীর ব্যর্থতার কারণেই আজকের নানা সংকট তৈরি হয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ আমরা জুলাই ও ৫ আগস্টের ঘটনাপ্রবাহে দেখেছি।”
তিনি বলেন, “এই দেশের ছাত্রসমাজ সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। জুলাই যোদ্ধারা প্রমাণ করেছে, তরুণরা চাইলে সবকিছুই পারে। আগামীর বাংলাদেশ যেন ন্যায়, মানবিকতা ও গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যায়—এই প্রত্যাশা রইলো।”
অন্যান্য অতিথিরাও বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শুধু একাডেমিক জ্ঞান অর্জন নয়, বরং দেশপ্রেম, নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তারা বলেন, পাবলিকিয়ান্স ফোরাম অব ভৈরব ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ ও ক্যারিয়ার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সভাপতির বক্তব্যে রাজিব মিয়া বলেন, “ভৈরবের শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছে। আমরা চাই এই ফোরাম শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বন্ধন, সহায়তা ও প্রেরণার প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠুক।”
অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত পরিবেশে সম্পন্ন হয়। শেষে আয়োজকরা ভবিষ্যতে নিয়মিতভাবে শিক্ষা, ক্যারিয়ার গাইডলাইন ও সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post