ভৈরবে হাজি জনাব আলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নিলেন প্রাক্তন ছাত্র ও এলাকাবাসী।

জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব প্রতিনিধি ॥

সারা দেশে বার্ষিক পরীক্ষা চললেও শিক্ষক কর্মবিরতির কারণে ভৈরব পৌরসভার কমলপুর এলাকার হাজি জনাব আলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে এক ভিন্ন চিত্র। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিদ্যালয়টিতে পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন স্থানীয় প্রাক্তন শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তা। দীর্ঘদিনের আন্দোলনে সহকারী শিক্ষকরা পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় এগিয়ে এসেছে স্থানীয় মানুষ, যা অভিভাবকদের মধ্যে স্বস্তির পাশাপাশি ক্ষোভ ও হতাশারও জন্ম দিয়েছে।

শিক্ষক নেই, পরীক্ষা নিচ্ছেন প্রাক্তন ছাত্র ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তা

বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নিয়মিত শিক্ষকরা অনুপস্থিত। তবে পরীক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে উপস্থিত হয়েছে। পরীক্ষা নিচ্ছেন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা কামাল আহমেদ এবং তার সঙ্গে এলাকার বেশ কয়েকজন তরুণ ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। পরীক্ষার সকল উপকরণ — প্রশ্নপত্র, খাতা, কলম — দিয়ে সহযোগিতা করছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রীনা বেগম।

ভূমি অফিসের কর্মকর্তা কামাল আহমেদ বলেন, “উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমি পরীক্ষা পরিচালনা করছি। শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে শিক্ষার্থীরা যাতে পরীক্ষার বাইরে না থাকে, সে জন্যই এ উদ্যোগ।”

প্রধান শিক্ষক রীনা বেগম বলেন, “সহকারী শিক্ষকরা আন্দোলনে থাকায় পরীক্ষায় অংশ নিতে আসেননি। আমার একার পক্ষে পরীক্ষা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই গতকাল থেকে ভূমি অফিস ও স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।”

আন্দোলনের মুখে পরীক্ষায় বিঘ্ন

সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবিতে টানা আন্দোলনের কারণে সারা দেশে বার্ষিক পরীক্ষা স্বাভাবিকভাবে অনুষ্ঠিত হলেও ভৈরবে বেশ কিছু বিদ্যালয়ে পরীক্ষায় ব্যাঘাত ঘটছে। অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, কিছু শিক্ষক নানাভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে নিরুৎসাহিতও করছেন।

অভিভাবক সাব্বির আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“আমার বাচ্চা দুই দিন ধরে পরীক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। কিন্তু শিক্ষকরা পরীক্ষা নিচ্ছেন না। গতকাল ভূমি অফিসের একজন কর্মকর্তা এসে এক শিফটের পরীক্ষা নেন। আজ এলাকাবাসী ও প্রাক্তন ছাত্ররা পরীক্ষা নিচ্ছে। কিন্তু শিক্ষকদের এমন আচরণ আমরা মেনে নিতে পারছি না।”

আরেক অভিভাবক বলেন,
“পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্ব শিক্ষকদের। আজ যেভাবে পরীক্ষা হচ্ছে, তাতে শিক্ষার্থীদের ফলাফলের মান কতটা বজায় থাকবে তা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।”

এলাকার যুবসমাজের উদ্যোগে পরীক্ষা চালু

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আবুল হোসেন বলেন,
“শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শিক্ষকরা এমন অবস্থায় আন্দোলন করছেন, বিষয়টি দুঃখজনক। বাচ্চাদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, তাই আমরা নিজেরাই পরীক্ষা পরিচালনায় অংশ নিয়েছি। ভূমি অফিস থেকেও একজন কর্মকর্তা সহযোগিতা করছেন।”

আরও কয়েকজন যুবক বলেন, শিক্ষকেরা পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় শিশুরা হতাশ হয়ে পড়ে। তাই সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে তারা এগিয়ে এসেছেন।

শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশাসন সন্তুষ্ট

ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা কামাল আহেমদ বলেন,
“অনেক শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে, যা খুবই প্রশংসনীয়। কোনো শিক্ষককে কেন্দ্রে পাওয়া যায়নি। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নেওয়ার জন্য।”

তিনি আরও জানান, অভিভাবকদের সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মনোবল ধরে রাখতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অভিভাবকদের ক্ষোভ— ‘পরীক্ষার সময় আন্দোলন উচিত হয়নি’

অভিভাবকদের অনেকেই মনে করছেন, পরীক্ষার সময় শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করছে।
তাদের ভাষায়—
“পরীক্ষার সময় আন্দোলন না করে আগেই দাবি-দাওয়া তুলে ধরলে এমন বিশৃঙ্খলা তৈরি হতো না। সন্তানদের পড়াশোনায় এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে।”

পরীক্ষা চলবে স্থানীয়দের সহযোগিতায়

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয়রা ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষকরা আন্দোলন চালিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে লক্ষ্যেই জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post