পাকুন্দিয়ায় মায়ের সাথে অভিমান করে মানসিক ভারসাম্যহীন শিশুর আত্মহনন

কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে। মানসিক ভারসাম্যহীন একটি শিশুর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত শিশুর নাম সুমনা (১১), সে উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের নারান্দী গ্রামের মো. কফিল উদ্দীনের মেয়ে।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই ২০২৫) বিকেল ৫টার দিকে নারান্দী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের একটি লিচু গাছ থেকে সুমনার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সুমনা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় জীবনযাপন করছিল। সে প্রায়ই এলোমেলোভাবে ঘোরাফেরা করত এবং স্বাভাবিক আচরণে ব্যত্যয় ঘটাত।

ঘটনার দিন সকালে মায়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটির জেরে সুমনা অভিমানে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, মায়ের বকুনি ও মানসিক অবস্থার প্রভাবে সে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। পরে সন্ধ্যার দিকে স্থানীয়রা একটি লিচু গাছে তার নিথর দেহ ঝুলতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়।

পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাখাওয়াৎ হোসেন জানান, শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, “সুমনার মৃত্যু আত্মহত্যা না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, তা নির্ভর করছে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের উপর। আমরা সকল দিক বিবেচনায় তদন্ত করছি।”

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, সুমনার আচরণ কিছুটা অস্বাভাবিক ছিল এবং সে প্রায় সময়ই একা একা মাঠে বা গাছতলায় বসে থাকত। তার আচরণগত সমস্যার কারণে পরিবারের সদস্যরা মাঝে মধ্যে বিরক্ত হতেন। তবে তারা কখনো ভাবেননি যে, এই শিশুটি এমন চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের শিশুরা অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকে। সামান্য অপমান, বকুনি বা অবহেলা থেকেও তারা মারাত্মক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। পরিবার, সমাজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

এই দুঃখজনক ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। তারা বলেছেন, এমন মর্মান্তিক ঘটনা ভবিষ্যতে যেন না ঘটে, সেজন্য পরিবারগুলোকে আরও সচেতন ও সংবেদনশীল হতে হবে।

ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে নারান্দী গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পাড়াপ্রতিবেশীরা সুমনার জানাজা ও দাফনকার্যে অংশগ্রহণ করেন এবং তার পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।

এটি কেবল একটি পারিবারিক ট্র্যাজেডি নয়, বরং সমাজের সকল স্তরের জন্য একটি সতর্কবার্তা। শিশুর মানসিক সুস্থতা, পারিবারিক সম্পর্ক এবং আবেগীয় নিরাপত্তা নিয়ে আরও সচেতন হওয়া জরুরি। বিশেষ করে যারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বা মানসিকভাবে দুর্বল, তাদের প্রতি পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব অনেক বেশি।

#কিশোরগঞ্জসংবাদ #Kishoreganjsongbad #পাকুন্দিয়াসংবাদ #শিশুআত্মহত্যা #মানসিকস্বাস্থ্য #NarandiKishoreganj

Post a Comment

Previous Post Next Post