কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় সড়কে সংঘটিত এক চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ অভিযানে নেমে মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে ১ হাজার ৪২০টি হাঁস উদ্ধার এবং তিনজন ডাকাতকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে ছিনতাই হওয়া এই হাঁসভর্তি পিকআপ ভ্যানটি এখনও উদ্ধার না হলেও, ডাকাত দলের একটি বড় অংশকে শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ডাকাতির এ ঘটনা ঘটে ২৯ জুন দিবাগত রাতে। ঘটনার সময় পিকআপটি ভৈরব শহরের কাশবন রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন সড়কে পৌঁছালে, একদল দুর্বৃত্ত একটি প্রাইভেটকার রাস্তার মাঝে আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে পথরোধ করে। এরপর ৫-৬ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র—চাপাতি, রামদা ও ছুরি—নিয়ে চালক ও সহকারীর ওপর হামলা চালায়। চালক ও হেলপারকে বেধড়ক মারধর করে তারা পিকআপভর্তি হাঁস নিয়ে পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান মিয়া জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাঁস সংগ্রহ করে তা পরিবহন করে থাকেন। ডাকাতির দিন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার নরখানা গ্রামে রোকন মিয়া নামের এক খামারির খামার থেকে ১ হাজার ৪৩৫টি হাঁস কিনে ফেনীর পরশুরামে সরবরাহের জন্য পাঠান। পথে ডাকাতির শিকার হয় পিকআপটি।
অভিযোগ পাওয়ার পরপরই পুলিশ তদন্তে নামে। ঘটনাটি ভৈরব থানায় মামলা আকারে নথিভুক্ত হয়। এর পর পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তা ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ২ জুলাই রাতে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন—রুবেল মিয়া, আপন মিয়া এবং বাপ্পী মিয়া।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানি বলেন, “আমরা অপরাধীদের ধরতে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেছি। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাঁসগুলো উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। যদিও এখনো পিকআপ গাড়ি ও ভিকটিমের মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা উদ্ধার করা যায়নি, তবে তদন্ত অব্যাহত আছে।”
তিনি আরও জানান, “ডাকাতির ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত এবং সংঘবদ্ধ একটি চক্রের কাজ। এ চক্রের বাকি সদস্যদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
অন্যদিকে, হাঁসের মালিক রোকন মিয়াও হাঁসগুলো ফিরে পাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে পিকআপ ও চালকের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “হাঁসগুলো পেয়ে খুশি হলেও, চালকের মারধর ও চিকিৎসা খরচ নিয়ে আমি দুশ্চিন্তায় আছি। গাড়িটিও এখনো উদ্ধার হয়নি।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনা দেশের চলমান সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। বিশেষ করে রাতে পণ্যবাহী পরিবহনগুলো বারবার ডাকাতির শিকার হচ্ছে, যা ব্যবসায়ী ও খামারিদের জন্য বড় এক ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়রা পুলিশ প্রশাসনের এমন দ্রুত পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানালেও দাবি করছেন, এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, তার জন্য আরও কঠোর নজরদারি ও টহল জোরদার করতে হবে।#হাঁসডাকাতি #ভৈরবসংবাদ #কিশোরগঞ্জঅপরাধ #বাংলাদেশপুলিশ #পিকআপডাকাতি
Post a Comment