কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় দীর্ঘ চার ঘণ্টা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শতাধিক রোগী ও চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত স্টাফরা। মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পুরো হাসপাতাল অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, বন্ধ ছিল ল্যাব, জরুরি অপারেশনসহ সকল চিকিৎসা সেবা।
বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে জানা গেছে—উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিদ্যুৎ বিল দীর্ঘদিন যাবৎ বকেয়া ছিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালের নামে ২৩ লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট ট্রমা সেন্টারের নামে আরও ১৮ লাখ টাকাসহ মোট ৪১ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে যায়। এর জেরেই বিদ্যুৎ অফিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হয়।
ভৈরব বিদ্যুৎ অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সামছুল আলম জানান, "হাসপাতালের বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হয়েছিল। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দুপুর ১টার দিকে পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।"
চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালে উপস্থিত রোগীরা যেমন ভুগেছেন, তেমনি চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে চিকিৎসক ও নার্সদেরও। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই নিজের হাতে হাতপাখা চালিয়ে বাতাস নিচ্ছেন, কেউ কেউ গর্ভবতী রোগী কিংবা শ্বাসকষ্টে আক্রান্তদের চিকিৎসা না পেয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন।
হাসপাতালে ভর্তি কয়েকজন রোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "এটা কল্পনাও করিনি যে একটি সরকারি হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হতে পারে। আমরা অসুস্থ অবস্থায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি, কিন্তু এখন নিজেরাই সমস্যার শিকার।"
এ সময় হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট লুৎফর রহমান জানান, “প্রতিদিন প্রায় ৪০-৫০ জন রোগী আমাদের ল্যাবে সেবা নিতে আসে। আজ সকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা কোনো কাজই করতে পারিনি। রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।”
এদিকে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল করিম বলেন, "আজ আমাদের সিজারের নির্ধারিত সময় ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় কোনো অস্ত্রোপচার করা যায়নি। ল্যাবগুলো বন্ধ ছিল, অক্সিজেন এবং নেবুলাইজার সেবাও বন্ধ ছিল। দুপুর ১টার দিকে বিদ্যুৎ ফিরলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।"
চিকিৎসকদের অভিযোগ, এমন বিদ্যুৎ সংকট নিয়মিতই ঘটে। মাঝে মধ্যেই বিদ্যুৎ চলে যায়, যা সেবা কার্যক্রমে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। আজকের ঘটনায় সেটি চরম রূপ নেয়।
স্থানীয় সুশীল সমাজ ও রোগীর স্বজনরা বিষয়টিকে “অসচেতন প্রশাসনিক ব্যর্থতা” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, “সরকারি একটি হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জার বিষয়।”
বিশ্লেষকদের মতে, এ ঘটনা শুধু ভৈরব নয়, বরং দেশের অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনারও একটি প্রতিফলন। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি এড়াতে সময়মতো বিল পরিশোধ এবং প্রশাসনিক সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে, যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যবস্থাপনা আরও স্বচ্ছ হয়।#ভৈরব_স্বাস্থ্য_কমপ্লেক্স #বিদ্যুৎ_বিচ্ছিন্নতা #রোগীর_দুর্ভোগ #হাসপাতাল_সংকট
Post a Comment