কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় এক সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হামলার মামলা হিসেবে উপস্থাপন করে নিরপরাধ পাঁচজনকে আসামি করায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে তারা উপজেলা পরিষদ চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে একটি স্মারকলিপি তাড়াইল থানায় জমা দেন।
স্থানীয়দের দাবি, গত ১৩ মে উপজেলার চকপাড়া ঈদগাহ মাঠ এলাকায় ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে ভাদেরা গ্রামের ৭০ বছর বয়সী আব্দুল জলিলসহ তিনজন যাত্রী আহত হন। স্থানীয়দের সহায়তায় তারা তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। আব্দুল জলিল এখনো চিকিৎসাধীন থাকলেও অন্যরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
তবে এই দুর্ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পর, ২৭ মে জলিলের ছেলে সঞ্জু মিয়া আদালতে একটি মামলা করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, তার বাবাকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মারধর করে আহত করা হয়েছে। মামলায় তিনি স্থানীয় পাঁচজনকে আসামি করেন। অথচ প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, এটি ছিল নিছক একটি দুর্ঘটনা এবং এর পেছনে কোনো হামলার প্রমাণ নেই।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এলাকাবাসীরা এই মামলাকে উদ্দেশ্যমূলক এবং হয়রানিমূলক বলে অভিহিত করেন। তারা অভিযোগ করেন, সঞ্জু মিয়া রিকশাচালক সাদ্দাম হোসেনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা আদায় করেছেন এবং পরে ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আদালতের মাধ্যমে মামলা করেছেন।
এই প্রসঙ্গে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট মাহফুজুল হক। তিনি বলেন, “নিরীহ মানুষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে একটি দুর্ঘটনাকে ইচ্ছাকৃত হামলা হিসেবে সাজিয়ে মামলা করা হয়েছে। প্রশাসনের উচিত, দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করা এবং নিরপরাধদের হয়রানি বন্ধ করা।”
অন্যদিকে হাফেজ আবুল হাসেম বলেন, “মিথ্যা মামলায় গ্রামের মানুষকে হয়রানি করা হলে এর কঠোর প্রতিকার হওয়া উচিত। প্রশাসনের উচিত সত্য উদঘাটন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।”
তাড়াইল থানার ওসি (তদন্ত) শ্যামল মিয়া জানান, “আঃ জলিলের ছেলে সঞ্জু থানায় একটি অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি সত্য বলে মনে না হওয়ায় তা রেকর্ড করা হয়নি। তবে তিনি পরে আদালতে মামলা করলে তদন্তের দায়িত্ব পুলিশকে দেওয়া হয়। আমরা দ্রুতই সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করবো।”
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, যদি এ ধরনের মিথ্যা মামলা অব্যাহত থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষকে অহেতুক হয়রানির শিকার হতে হবে এবং ন্যায়বিচারের ধারণা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
এই ঘটনার পর তাড়াইল উপজেলায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত এবং নিরীহ মানুষের হয়রানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।#কিশোরগঞ্জ #তাড়াইল #সড়কদুর্ঘটনা #মিথ্যমামলা #মানববন্ধন #বাংলাদেশসংবাদ #আইনবিচার #নিরীহমানুষ #আদালত
Post a Comment