করিমগঞ্জে ইসিএ গ্রুপের "চা-পানের চত্বর" উদ্ভোদন

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ইসিএ গ্রুপ’ তাদের প্রথম প্রকল্প হিসেবে ‘চা পানের চত্বর’ নামক একটি স্বনির্ভর দোকান উদ্বোধন করেছে। দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নেওয়া এই উদ্যোগ ইতোমধ্যে সামাজিক পর্যায়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

“আমার টাকায় চলবে দেশ, গড়বো সোনার বাংলাদেশ”—এই প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ইসিএ গ্রুপের বহুমুখী প্রকল্প। ৩০ মে, বৃহস্পতিবার জাফরাবাদ ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটির প্রথম দোকান উদ্বোধন করা হয়। মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে আয়োজনটি শুরু হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইসিএ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও মেডিকেল শিক্ষার্থী মোঃ সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের সংগঠনে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন। আমাদের লক্ষ্য হলো, শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।” তিনি উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগ দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

কো-ফাউন্ডার জুবায়ের হাসান সাকিব বলেন, “বাংলাদেশে এখনো প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এই বিশাল জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারলে দেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।” তিনি আরও বলেন, ইসিএ গ্রুপ শুধু শিক্ষার্থীদের সংগঠন নয়, এটি একটি সম্ভাবনার প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সমাজ পরিবর্তনের জন্য বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

আরেকজন কো-ফাউন্ডার, ইঞ্জিনিয়ার মোঃ লতিফুল আজম রুকু জানান, "এই প্রকল্প ছাড়াও ‘সংখ্যা থেকে শক্তি’ এবং ‘দারিদ্র বিমোচন’ নামে আরও দুটি উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। ‘আমার টাকায় চলবে দেশ’ প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র পরিবারগুলোকে ব্যবসায়িক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং পরবর্তীতে অন্য অসচ্ছল পরিবারকেও সহায়তা করতে সক্ষম হয়।”

প্রকল্পটির প্রথম বাস্তব প্রয়োগ ঘটেছে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গন্ডা ইউনিয়নে। এখানে আর্থিকভাবে অসচ্ছল এবং ৩৭ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চা-কারিগর মোঃ মানিক মিয়াকে ‘চা পানের চত্বর’ নামের দোকানটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই দোকান থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে তিনি নিজের পরিবারের খরচ মেটাতে পারবেন এবং ভবিষ্যতে অন্যদেরও সহযোগিতা করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

উদ্বোধনী আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন ইসিএ গ্রুপের অন্যান্য সদস্য, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, মেডিকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকরা। সকলে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং ভবিষ্যতে ইসিএ গ্রুপের সঙ্গে থেকে সমাজ উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

এই দোকানটি শুধুমাত্র একটি চায়ের দোকান নয়; বরং এটি একটি সামাজিক বিপ্লবের সূচনা। এখানে আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে সমাজের অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের সহায়তার জন্য। ইসিএ গ্রুপ মনে করে, সমাজের প্রত্যেক সদস্য যদি তার অবস্থান থেকে কিছু করতে চায়, তবে একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলা অসম্ভব নয়।

এই ধরনের উদ্যোগ শিক্ষার্থী সমাজকে শুধু শিক্ষার গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ রাখছে না, বরং দেশ গঠনের প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছে। ইসিএ গ্রুপের এই পথচলা ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হবে বলে প্রত্যাশা করছে সকলে।
#ইসিএগ্রুপ #চাপানেরচত্বর #দারিদ্রবিমোচন #করিমগঞ্জসংবাদ #সামাজিকউদ্যোগ #স্বনির্ভরতাপ্রকল্প #বাংলাদেশশিক্ষার্থী

Post a Comment

Previous Post Next Post