"হুমায়ূন আহমেদের 'সুখী নীলগঞ্জে' ১৪ বছর ধরে থামে না ট্রেন

কিশোরগঞ্জ জেলার নীলগঞ্জ রেলস্টেশন একসময় ছিল বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র। স্টেশনটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদী এবং চন্দ্রাবতীর বাড়ির ঐতিহ্যের কারণে জায়গাটি পেয়েছিল আলাদা গুরুত্ব। শুধু তাই নয়, আশির দশকে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার নাটক ও বইয়ে এই স্টেশনকে বিশেষভাবে তুলে ধরেন—একবার তো ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকে এক চরিত্রের নাম রাখেন ‘সুখী নীলগঞ্জ মামা’। সেই সুখী নীলগঞ্জ এখন শুধুই স্মৃতি।

২০১১ সালের ৪ জুলাই, হঠাৎ জনবল প্রত্যাহার করে বন্ধ করে দেওয়া হয় স্টেশনটি। এরপর থেকে কোনো ট্রেন আর এখানে থামে না। বন্ধ হয়ে যায় যাত্রীসেবা ও পণ্য পরিবহন কার্যক্রম। দীর্ঘ এক যুগ ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় স্টেশনের ব্লক মেশিন, সিগন্যাল ক্যাবল, টিকিট কাউন্টার, ডাকবাক্সসহ সব যন্ত্রপাতি ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। যেখানটিতে একসময় যাত্রীদের ভিড় ছিল, এখন সেখানে নীরবতা ও ধ্বংসস্তূপ।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, রেলস্টেশনকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল নীলগঞ্জের বাজার ও ব্যবসা-বাণিজ্য। প্রতিদিন শত শত মানুষ ট্রেনে আসা-যাওয়া করতেন, যা এখানকার অর্থনীতিকে করেছিল সক্রিয়। কিন্তু স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ব্যবসায় মন্দা চলছে। আগের মতো আর বিকিকিনি নেই, কমেছে লোকসমাগমও।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. সিরাজুল ইসলাম বিষয়টিকে জাতীয় পর্যায়ের ক্ষতি হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “এই স্টেশনের সঙ্গে আমাদের ইতিহাস জড়িত। দেশ-বিদেশের মানুষ একসময় চন্দ্রাবতীর বাড়ি দেখতে ট্রেনে এখানে আসতেন। হঠাৎ করেই স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া অন্যায়।” তিনি দ্রুত স্টেশনটি চালুর দাবি জানান রেল কর্তৃপক্ষের কাছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্টেশনের সিগন্যাল কক্ষ, টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং এরিয়া—সবই পড়ে আছে অব্যবহৃত অবস্থায়। মাকড়সার জালে ঢাকা কাউন্টার, মরিচা পড়া যন্ত্রপাতি আর খোলা দরজাগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়—এখানে আর কত বছর ধরে থেমে আছে সময়।

এদিকে, কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ইউসুফ জানান, স্টেশনটি বন্ধ হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ তার জানা নেই। তিনি বলেন, “আমার আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারাই ভালো বলতে পারতেন। তবে যতটুকু জানি, লোকবল সংকটের কারণেই স্টেশনটি বন্ধ রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে জনবল বাড়লে পুনরায় চালু হতে পারে।”

এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের বছরের পর বছর বন্ধ থাকাটা শুধু একটি এলাকাকেই নয়, একটি জেলার সামগ্রিক যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক গতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যেখানে রেল মন্ত্রণালয় নানা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, সেখানে নীলগঞ্জের মতো সম্ভাবনাময় স্টেশনটি অবহেলিত হয়ে পড়া দুর্ভাগ্যজনক।

স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। তাদের মতে, স্টেশনটি চালু হলে কেবল যাতায়াত সুবিধাই নয়, আবারও প্রাণ ফিরে পাবে স্থানীয় অর্থনীতি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।

#নীলগঞ্জরেলস্টেশন #কিশোরগঞ্জ #বাংলাদেশরেলওয়ে #হুমায়ূনআহমেদ #সুখী_নীলগঞ্জ #রেলস্টেশনবন্ধ #যাত্রীদুর্ভোগ #আঞ্চলিকঅর্থনীতি #রেলপথউন্নয়ন

Post a Comment

Previous Post Next Post