শনিবার, ৩১ মে—সারাদেশের ন্যায় কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গুরুদয়াল সরকারি কলেজেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সকাল থেকেই কলেজ চত্বরে পরীক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর ছিল পরিবেশ। প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্থান থেকে এসে পরীক্ষায় অংশ নেয়। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে শিক্ষার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে আসে দুটি বড় ছাত্র সংগঠন—ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল।
গুরুদয়াল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে কলেজের প্রধান ফটকের পাশে একটি হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়। সকাল ৯টার মধ্যেই সংগঠনের নেতাকর্মীরা হেল্প ডেস্ক প্রস্তুত করেন, যেখানে আগত পরীক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন জমা রাখার সুব্যবস্থা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, প্রয়োজনীয় সিট প্ল্যান ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণসহ নানা ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হয়।
এছাড়া ইসলামি ছাত্রী সংস্থার পক্ষ থেকেও একটি আলাদা হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়, যেখানে ছাত্রীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়। নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও প্রয়োজন বিবেচনায় তাদের জন্য আলাদা নারী স্বেচ্ছাসেবক দল নিয়োজিত ছিল।
অন্যদিকে, গুরুদয়াল কলেজ শাখা ছাত্রদলও পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় ব্যাপক সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে। সংগঠনের পক্ষ থেকে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কলম ও পানীয় বিতরণ করা হয়। এছাড়া যেসব শিক্ষার্থী ভুল করে অন্য ভেন্যুর পরিবর্তে গুরুদয়াল কলেজে চলে আসে, তাদের দ্রুত সঠিক ভেন্যুতে পৌঁছে দিতে ‘বাইক সেবা’ চালু করে ছাত্রদল। সময়মতো পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে যাওয়ায় অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করে।
শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, অভিভাবকদের দিকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় ছাত্রদল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে অভিভাবকদের মধ্যে পানীয় ও বিস্কিট বিতরণ করা হয়, যা উপস্থিত সবার মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলে।
এই সেবামূলক উদ্যোগগুলো শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবক ও শিক্ষক মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। একজন পরীক্ষার্থী জানান, "আমরা দূর-দূরান্ত থেকে এসেছি। এখানে এসে এমন সেবা পেয়ে সত্যিই আমরা অভিভূত।" আরেকজন বলেন, "আমার মোবাইল জমা দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না, ছাত্রশিবিরের হেল্প ডেস্কে এসে নিরাপদে রেখে পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছি।"
গুরুদয়াল কলেজের এক শিক্ষক বলেন, "আজকের ভর্তি পরীক্ষায় ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের সেবামূলক কার্যক্রম আমাদের অভিভূত করেছে। আমরা শিক্ষক হিসেবে চাই, ছাত্র রাজনীতির এই ইতিবাচক দিকটি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকুক।"
সচেতন মহল মনে করছে, এমন কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের উপকারে আসে এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতি মানুষের আস্থাও বাড়ায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলছেন, শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সেবক হতে হলে রাজনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে বাস্তব সহায়তার ক্ষেত্রেই এগিয়ে আসতে হবে।
অবশ্য রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ছাত্রসংগঠনগুলোর এ ধরনের মানবিক প্রয়াস সামাজিক ও নৈতিকভাবে ইতিবাচক বার্তা দেয়। এই উদ্যোগ শুধু ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সহায়তা করেই থেমে থাকেনি, বরং শিক্ষাঙ্গনে সৌহার্দ্য ও দায়িত্বশীলতার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।#ভর্তি_পরীক্ষা #ছাত্রশিবির #ছাত্রদল #জাতীয়_বিশ্ববিদ্যালয় #গুরুদয়াল_কলেজ #মানবিক_সেবা #বাংলাদেশ
Post a Comment