ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনে কার্যত অচলাবস্থা বিরাজ করছে। আন্দোলন ও প্রশাসনিক স্থবিরতার কারণে নাগরিক সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ঢাকার নগর ভবনে তালা ঝুলছে, কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে সেখানকার আটটি আঞ্চলিক কার্যালয়সহ সকল সেবাদান কার্যক্রম।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া গণমাধ্যমে জানান, "নগর ভবনসহ সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক অফিসগুলো কয়েকদিন ধরে বন্ধ। ফলে নাগরিকদের জন্য কোনও ধরনের সেবা আমরা দিতে পারছি না।"
মেয়র পদে থাকা শেখ ফজলে নূর তাপস ২০২০ সালের ১৬ মে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট, সরকার পতনের দুই দিন আগে তিনি দেশত্যাগ করেন। একইভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামও আত্মগোপনে চলে যান এবং পরে এক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। এই প্রেক্ষাপটে, গত বছরের ১৯ আগস্ট সরকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়।
মেয়রদের মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ১৫ মে। তবে দক্ষিণ সিটি নির্বাচন ঘিরে নতুন বিতর্কের জন্ম হয়। ২০২০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাপস বিএনপির ইশরাক হোসেনকে পরাজিত করলেও চলতি বছরের ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন (ইসি) গেজেট প্রকাশ করে ইশরাকের মেয়র পদে নিয়োগ নিশ্চিত করে।
কিন্তু এই ঘোষণার পরদিনই সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। ২৮ এপ্রিল আরেকটি নোটিশে রায়ের সঠিকতা ও শপথ অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এই বিষয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের হয় এবং মঙ্গলবার শুনানির পর বৃহস্পতিবার আদেশ দেয়ার কথা জানানো হয়।
এদিকে শপথ অনুষ্ঠান এখনও অনিশ্চিত। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলছে, আইনি জটিলতা ও মেয়াদ সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধানে তারা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের অপেক্ষায় আছে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “যেহেতু নানা ধরনের আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে, তাই আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছি। আদালতের নির্দেশনা ও মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”
এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা উঠেছে। এনসিপি (ন্যাশনাল সিটিজেন্স প্ল্যাটফর্ম) নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। তাদের দাবি, ইসি দক্ষিণ সিটির মেয়র নির্বাচনের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করে রহস্যজনকভাবে গেজেট প্রকাশ করেছে, যা সংকটের জন্ম দিয়েছে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচন না হওয়ায় সারা দেশে নাগরিক সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং প্রশাসনিক অফিসগুলো একটি দলের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। একমাত্র সমাধান এখন নির্বাচন আয়োজন।”
নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্য আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “কোন নির্বাচন আগে হবে, সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। কমিশনের দায়িত্ব শুধু নির্বাচন পরিচালনা করা।”
সর্বশেষ, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, সরকার নাগরিক ভোগান্তির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এবং সংকট সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
#ঢাকা_সিটি_নির্বাচন #ইশরাক_হোসেন #ডিএসসিসি #ডিএনসিসি #নির্বাচন_সংকট #বাংলাদেশ_রাজনীতি #আইনি_জটিলতা #নাগরিক_সেবা #সরকার #নির্বাচন_কমিশন
Post a Comment