কুলিয়ারচর প্রতিনিধি: সবুজ মিয়া
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের নয়াহাটি গ্রামে পারিবারিক কলহের রেশ ধরে ভয়াবহ এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মাদকাসক্ত এক ভগ্নিপতির কুড়াল ও ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছে রাকিব মিয়া (১৩) নামের এক কিশোর শ্যালক এবং গুরুতর আহত হয়েছে তার বড় ভাই জিসান মিয়া (১৬)। ঘটনার পরপরই পুলিশ অভিযুক্ত ঘাতক ফারুক মিয়াকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে।
ঘটনার পটভূমি ও পারিবারিক সম্পর্ক:
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, নিহত রাকিব ও আহত জিসান ভৈরবের নয়াহাটি গ্রামের বাসিন্দা সামসুল হক মিয়ার ছেলে। অভিযুক্ত ফারুক মিয়ার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলায় হলেও দীর্ঘদিন ধরে সে তার নানাবাড়ি নয়াহাটিতে বসবাস করছিল। পাঁচ বছর আগে সে তার মামাতো বোন নাবিলা বেগমকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ির দেওয়া জায়গায় একটি ঘর তৈরি করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুটি সন্তান রয়েছে।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই ফারুক মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। রিকশাচালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করলেও তার নেশাজনিত আসক্তি পারিবারিক জীবনে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। প্রায় প্রতিদিনই মাদক সেবনের পর বাড়িতে ফিরে স্ত্রী ও সন্তানদের ওপর চালাতেন নির্যাতন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল তার শ্যালক রাকিব ও জিসান।
রাতের রক্তাক্ত ঘটনা:
গত শুক্রবার (৯ মে) দিবাগত রাত ১১টার দিকে ফারুক আবারও মাদক সেবন করে বাড়িতে ফিরে স্ত্রী ও সন্তানদের মারধর শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে ছোট শ্যালক রাকিব প্রথমে তার বোন ও ভাগনেকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে ফারুক হঠাৎ ঘর থেকে একটি কুড়াল এনে তার মাথায় আঘাত করে। রাকিব ঘটনাস্থলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
এসময় বড় ভাই জিসান ছোট ভাইকে রক্ষায় ছুটে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে ফারুক পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা আহত দুই ভাইকে রাতেই বাজিতপুরের ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করলে চিকিৎসক রাকিবকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে জিসান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘাতক গ্রেপ্তার ও আইনি পদক্ষেপ:
ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নাজমুস সাকিব জানান, “খবর পেয়ে রাতেই আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করি। পরদিন শনিবার সকালে কুলিয়ারচরের ছয়সূতি এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ফারুক মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয় এবং আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।”
স্বজনদের আহাজারি ও প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়া:
রাকিব ও জিসানের বাবা সামসুল হক এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে বলেন, “আমার সন্তানদের উপর যারা এই বর্বরতা চালিয়েছে, আমি তার ফাঁসি চাই। ফারুক শুরু থেকেই পরিবারের জন্য অশান্তির কারণ ছিল।”
প্রতিবেশী শাকুর মিয়া ও মাহবুব মিয়া জানান, “বিয়ের পর থেকেই ফারুক নানা রকম সমস্যা তৈরি করে আসছিল। সে একজন চরম মাদকাসক্ত ও বদমেজাজি মানুষ। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এসব সহ্য করে আসছিলাম। এখন সে এক প্রাণ নিয়েছে, আরেকজন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।”
Post a Comment