সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের নতুন রাজনৈতিক যাত্রা: ইসলামী আন্দোলনে যোগদানের ঘোষণা বরিশালের চরমোনাই দরবারে
দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার পর দলীয় সংকট ও নেতৃত্বের প্রশ্নে নতুন পথ বেছে নিলেন পটুয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। ইসলামী মূল্যবোধ ও আদর্শিক অবস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি যোগ দিয়েছেন চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে।
গত ৬ মে (মঙ্গলবার) বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই দরবারে আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক সভায় দলের আমিরের হাতে হাত রেখে ইসলামী আন্দোলনে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন শতাধিক অনুসারী ও রাজনৈতিক কর্মী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়ক কে. এম. শরীয়াতুল্লাহ।
মোস্তাফিজুর রহমানের এই দলবদল অনেকের কাছেই অবাক করার মতো হলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে এক নতুন মোড় আনতে পারে। স্থানীয় বিএনপির কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও প্রভাব কমে যাওয়ার পাশাপাশি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং নেতৃত্ব সংকট তার এই সিদ্ধান্তে ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত হন মোস্তাফিজুর রহমান। যদিও ওই সংসদ ছিল স্বল্পস্থায়ী এবং পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক জীবনে তিনি কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে দলটির স্থানীয় কমিটিতে তাকে শুধু কার্যকরী সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
চরমোনাই দরবারে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেওয়ার সময় মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দেশের রাজনীতিতে আদর্শিক শূন্যতা ও দুর্নীতিপরায়ণ নেতৃত্বের কারণে সাধারণ মানুষ আজ হতাশ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একটি ব্যতিক্রমধর্মী দল হিসেবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তাই জনগণের অধিকার ও ইসলামি আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি এই দলে যোগ দিয়েছেন।
তিনি আরও ঘোষণা দেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে ‘হাতপাখা’ প্রতীকে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তিনি আশা করেন, ইসলামী আন্দোলনের ব্যানারে তরুণ ও ধর্মপ্রাণ ভোটারদের সমর্থন নিয়ে একটি শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারবেন।
চরমোনাই পীর মুফতি রেজাউল করীম এ সময় বলেন, “অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিকের যোগদান আমাদের আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করবে। আমরা রাজনীতিকে পবিত্র রাখতে চাই, জনগণের সেবা করতে চাই, আর সে লক্ষ্যেই সবাইকে একত্রিত করছি।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মোস্তাফিজুর রহমানের এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় রাজনীতিতে একটি নতুন সমীকরণ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে পটুয়াখালী-৪ আসন দুই প্রধান দলের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাঠ হয়ে থাকলেও এবার ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সেখানে নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেন।
দলবদলের রাজনীতির এই সময়টায় এক সময়ের সংসদ সদস্যের এমন সিদ্ধান্ত হয়তো আরও অনেক নেতার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াবে।
Post a Comment